করোনা রোগী হয়েও তিন হাসপাতালের প্রত্যাখ্যান! আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ভর্তির পরেও মৃত্যু তরুণের

রাজেন রায়, কলকাতা, ১১ জুলাই: রাজ্যে করোনা রোগী ফেরালে হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা থেকে লাইন্সেস বাতিলের মত হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও করোনা পজিটিভ হয়েও তিন-তিনটি হাসপাতাল ফিরিয়ে দিল ওই যুবককে। এর পরে যুবকের মা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিলে ১১ ঘন্টা পরে শুক্রবার বিকেলে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয় ওই যুবককে। তারপরেও রাতেই মৃত্যু হল ইছাপুরের বাসিন্দা করোনা আক্রান্ত যুবক শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের।

সূত্রের খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই শরীর খারাপ থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই যুবকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ যুবকের বাবা-মা তাকে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সুগার পরীক্ষাতে তার হাই সুগার ধরা পড়ে। ইএসআই হাসপাতালে আইসিসিইউ ফাঁকা না থাকায় তাকে বেলঘড়িয়া মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে রেফার করে দেন কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালের ডাক্তাররা। এদিকে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলেও ওই নার্সিংহোম যুবকের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখতে চায়। রিপোর্ট না থাকায় ওই নার্সিংহোমে যুবকের করোনা পরীক্ষা হয়। আর তারপরেই রিপোর্ট আসে করোনা পজিটিভ। তখন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বলে, এটা কোভিড হাসপাতাল নয়, আপনারা অন্য কোথাও নিয়ে যান।

এদিকে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে থেকে ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে ওই যুবকের। যুবকের বাবা মা তাকে নিয়ে তাকে নিয়ে ফের কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে ফিরে আসেন। সেখানে চিকিৎসকরা পাশ্ববর্তী কোভিড হাসপাতাল সাগরদত্তে তাঁকে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেন। এদিকে সাগরদত্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বলা হয়, বেড নেই। একটু অক্সিজেনও ওই অসুস্থ যুবকের জন্য চাইলেও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ বাবা-মায়ের।

এরপরেই চোখের সামনে সন্তানের স্বাস্থ্যের অবনতি দেখে কার্যত দিশেহারা হয়ে যান বাবা। পাড়ার লোকের পরামর্শে স্বাস্থ্যভবনের হেল্পলাইনে তাঁরা ফোন করেন। সেখান থেকে জানানো হয়, কেউ কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়নি। সেই রিপোর্ট না পেলে তারা কিছু করতে পারবেন না। শেষপর্যন্ত কলকাতা পুলিশের হেল্পলাইনে ফোন করে যুবকের পরিবার। সেখান থেকে বেলঘড়িয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। বেলঘড়িয়া থানা থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। এবার যুবকের অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে যান পুলিশকর্মীরাও।

দুপুর দু’টো নাগাদ পুলিশের পরামর্শে ছেলেকে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন ওই দম্পতি। কিন্তু অভিযোগ, সেখানেও ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এরপরেই শুভ্রজিতের মা ছেলেকে ভর্তি না নিলে আত্মহত্যার হুমকি দিলে স্ট্রেচারে করে ওই যুবককে ওয়ার্ডের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু বহুক্ষণ ধরে বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকায় স্বাস্থ্যের চূড়ান্ত অবনতি হয়ে গিয়েছিল ওই যুবকের। শুক্রবার রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা এবং সমন্বয়ের অভাব প্রকট করে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *