আমাদের ভারত, ৯ সেপ্টেম্বর:
প্রয়োজনীয় নথি ছিল না তা সত্বেও প্রাথমিকে চাকরি হয়েছিল ১২ জনের। একটি মামলার প্রেক্ষিতে এমন তথ্য পেয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। এরপর ২৭ আগস্ট জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে এই বিষয়ে সুবিচারের নির্দেশ দেয় আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে নির্দেশ দেয় ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকে নিয়োগ হওয়া ১৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের বিশদ তথ্য, তালিকা আকারে আদালতে পেশ করতে হবে।
২০১৪–য় প্রাথমিকে টেটের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আর টেট হয় ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ২০১৪_র টেট থেকে ১৫ হাজার ছেলেমেয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। এই তথ্য হাইকোর্টে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীরাই দিয়েছেন। তখন আদালত জিজ্ঞেস করে নিয়োগ হওয়া ১৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের তথ্য পর্ষদ আনতে পারবে কিনা? তার উত্তরে নিমরাজি হওয়ার পরিস্থিতি দেখে আদালত আদেশ জারি করে।
রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আদালত বারবার প্রশ্ন তুলেছে। এবার একটি মামলা থেকে দুর্নীতির গন্ধ পেতেই জনস্বার্থ মামলার নিদান দেয় আদালত। প্রত্যক্ষ দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলে কোনও মামলায় জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয় না বলেই ধরে নেওয়া হয়। আর এই নিয়োগে জনস্বার্থ মামলার নিদান খোদ হাইকোর্টের বিচারপতি দিয়েছেন। ফলে খুব সহজেই বোঝা যায় দুর্নীতি কতটা গভীরে।
উত্তর দিনাজপুরের স্বদেশ দাস প্রাথমিক শিক্ষক পদে যোগ দেন। ২০১৯ সালের নিয়োগ পত্র পাওয়ার তিনদিন পর উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ থেকে তাকে ডেকে পাঠানো হয়। ওই প্রাথমিক শিক্ষককে তার যোগ্যতার মান সংক্রান্ত নথি পেশ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি। ওই শিক্ষক যে যোগ্য নির্বাচিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষক হয়েছেন তার প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন। তাঁকে আরো একদিন সুযোগ দেওয়া হয়। তাতেও তিনি ব্যার্থ হন। এরপরই ওই প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হয়। কোনো নথি দেখাতে পারছেন না ওই প্রাথমিক শিক্ষক তা নিজেই লিখে দেন তিনি। কিন্তু এরপর চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন স্বদেশ দাস।
২৭ আগস্ট বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশে জানান এক্ষেত্রে নিয়োগের সুপারিশকারী সংস্থা প্রাথমিক বোর্ডের নিছক ভুলের জন্য নিয়োগ হয়েছে মামলাকারী। নিয়োগকারীর একটা ভুলে কারোর চাকরি অধিকার জন্মে যায় না।
মামলাকারীর স্বদেশ দাস হাইকোর্টে জানান, তার মতো ১২ জন প্রাথমিক শিক্ষকরা শিক্ষকতা করছেন একই নথি নিয়ে। এই ১২ জনের নাম ঠিকানাও হাইকোর্টে পেশ করা হয়।
বিচারপতি কিছুটা বিস্মিত হন। আর এরপরই টেটের যোগ্যতামানের নোটিশ ছাড়াই চাকরির কথা জেনে জনস্বার্থ মামলার নিদান দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ১২ জন যেহেতু সিঙ্গল বেঞ্চের মামলায় অন্তর্ভুক্ত নন তাই তাদের সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে জনস্বার্থ মামলার নির্দেশ দেয় সিঙ্গেল বেঞ্চ।