রাজেন রায়, কলকাতা, ৩০ মে: করোনা ইস্যুতে বারংবার যেন বিদ্রোহ প্রকট হয়ে উঠছে কলকাতা পুলিশে। এই নিয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় বার বিক্ষোভ দেখালেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। শুক্রবার বিকেল থেকেই সল্টলেকের এএফ ব্লকে দফায় দফায় চতুর্থ ব্যাটালিয়নের দফতর এবং ব্যারাকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পুলিশকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন। শীর্ষ আধিকারিকরা সামলাতে গেলে তাদের ওপর আলো নিভিয়ে চলে ইটবৃষ্টি, এমনকি মারধরও। এর আগে পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (পিটিএস) এবং গড়ফা থানায় একই কারণে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা।
গত দু’বারের মত এবারও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন পুলিশকর্মীরা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে চতুর্থ ব্যাটালিয়নের এক কর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শুক্রবার সকালে জানাজানি শুরু হতেই শুরু হয় পুলিশকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ। তাঁদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই তাঁদের বিভিন্ন কনটেনমেন্ট জোনে ডিউটিতে পাঠানো হচ্ছে এবং তাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের জীবনের কোনও দাম নেই। ব্যাটেলিয়নের আবাসনে বা অফিসে করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ দেখা দেওয়া কর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে না। এমনকি তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেও পাঠানো হচ্ছে না।
ওই কর্মীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কথা জানিয়ে শুক্রবার দুপুরে ডিউটিতে যেতে অস্বীকার করেন বেশ কিছু পুলিশকর্মী। তারা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যেতে চান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের কথাকে আমল না দিয়ে ডিউটিতে যেতে বলেন। এর পরেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পুলিশকর্মীদের একটা বড় অংশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও।
চতুর্থ ব্যাটালিয়নের ক্যাম্প চত্বরের আলো নিভিয়ে, কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ভাঙ্গচুর শুরু করেন। হাতে লাঠি, বাঁশ নিয়ে ক্যাম্পে থাকা কিছু আধিকারিকদের তাড়াও করেন তাঁরা। অফিস ভাঙ্গচুর করেন। সেই সঙ্গে ক্যাম্পে ঢোকার সমস্ত গেট বন্ধ করে দেন। বিক্ষোভ-ভাঙ্গচুরের খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের ঢুকতে বাধা দেন বিক্ষোভকারীরা। ভিতর থেকে যুগ্ম কমিশনার এবং অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকেন বিক্ষুব্ধ পুলিশকর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ ক্যাম্পের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে র্যাফ মোতায়েন করা হয় ক্যাম্পের সামনে। অবশেষে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বিক্ষুব্ধদের একাংশকে শান্ত করে গেট খোলানোর ব্যবস্থা করেন শীর্ষ আধিকারিকরা। ভিতরে ঢুকে বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। একশ্রেণীর পুলিশ শীর্ষ কর্তাদের দুর্ব্যবহার এবং খারাপ আচরণ পুলিশের বিক্ষোভের সঞ্চার ঘটাচ্ছে বলে দাবি পুলিশকর্মীদের। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন কোনও কড়া ব্যবস্থা নিতে চায় না লালবাজার। পুলিশকর্মীদের দাবি অনুযায়ী সত্যিই কিছু পুলিশকর্তারা এসব ঘটনার জন্য দায়ী, নাকি বাইরে থেকে কোনও ইন্ধন জোগানো হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হবে। তবে পুলিশের নিজেদের মধ্যেই আত্মসমালোচনা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশকর্মীদের একাংশ।