আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২১ জানুয়ারি: লকডাউনের ফলে ২০২০- র মার্চ মাসের ২২ তারিখ থেকেই একপ্রকার কর্মহীন হয়ে পড়েছেন রেল হকাররা। প্রায় এক বছর ধরে রুজি-রোজগারহীন রেল হকারদের অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন। সম্প্রতি, ট্রেন চলাচল বিশেষত লোকাল ট্রেন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর, আশার আলো দেখছিলেন হকাররা। তাঁরা লোকাল ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্তকে তাই স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু নভেম্বর থেকে লোকাল ট্রেন চালু হলেও হকারদের ট্রেনে ওঠার উপর এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। কিছু কিছু স্টেশন থেকে হকাররা উঠলেও, তা আরপিএফ বা রেল পুলিশের নজর এড়িয়েই চলছে। মেদিনীপুর স্টেশন থেকে হকাররা ওঠার চেষ্টা করলে বা স্টেশন চত্বরে ঘোরাঘুরি করলেই আরপিএফ বা রেল পুলিশের হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও বাম শ্রমিক ইউনিয়নের অভিযোগ। আর এই পরিস্থিতিতেই গতকাল রাতে মেদিনীপুর শহরের ঝর্ণাডাঙার বাসিন্দা রেল হকার প্রেমচাঁদ সাউ (৫২) আত্মহত্যা করেছেন বলে মৃতের পরিবার ও শ্রমিক ইউনিয়নের অভিযোগ। অভিযোগের তীর সরাসরি মেদিনীপুর স্টেশনের দায়িত্বে থাকা রেল পুলিশের দিকে। বুধবার তাঁদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলেই পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রেমচাঁদ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে মারাত্মক অভিযোগ বাম শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যদের। একই অভিযোগ মৃতের স্ত্রী সহ পরিবারের। পুলিশ এই অস্বাভাবিক মৃত্যু’র তদন্ত শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, প্রেমচাঁদ সাউ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা রেল হকার। রেলে ছোলা-বাদাম বিক্রি করেই সংসার চালাতেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা এও জানিয়েছেন, গত এক বছর ধরে রুজি-রোজগার হারিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। এরপর, গতকাল মেদিনীপুর স্টেশনের দায়িত্বে থাকা রেল পুলিশ তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্য ও বাম শ্রমিক ইউনিয়ন সিটুর সদস্যদের। চুড়ান্ত অপমান ও মনাসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে, রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া করে, নিজের ঘরেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। সকালে বাড়ির লোক মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েন! সহকর্মীর এই মর্মান্তিক মৃত্যু’র ঘটনায় তাঁরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও শোকস্তব্ধ। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উপযুক্ত তদন্ত ও বৃহত্তর আন্দোলনের কথা জানিয়েছেন সিটুর হকার ইউনিয়নের সদস্যরা। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।