অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১৬ ফেব্রুয়ারি: বিজেপির অভিনব উদ্যোগ। মিসড কলে তৈরি হবে বুথ কমিটি। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে এমনই বার্তা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
আসলে বহুদিন ধরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছে, রাজ্যে বুথ কমিটি করতে। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে প্রায় ৮০ হাজার বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথের জন্য একটি করে কমিটি থাকবে, যারা ভোটের দিন দলের হয়ে কাজ করবে। আর সেই কমিটিরই অভাব ছিল এতদিন। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন পার হয়ে গেলেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব সেই বুথ গঠন করে উঠতে পারেনি। এতদিনে ৪০ হাজার বুথের মধ্যে খুব বেশি হলে ১০ হাজার মতো বুথ কমিটি তৈরি হয়েছে। সংখ্যালঘুদের এলাকায় কোনও বুথ কমিটিই নেই।
এই অবস্থায় ‘বুথ গঠন করবই, সোনার পশ্চিমবঙ্গ গড়বই। কল করুন- ৭৮২০০৭৮২০০’। বড় হরফে বুধবার ফেসবুকে এই বার্তা দেন অমিতাভবাবু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের লাইক, মন্তব্য ও শেয়ার হয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ৪০০, ৪১০ ও ২৭৯।
সরোজ কুমার নায়েক লিখেছেন, “যাঁরা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে ময়দানে নেমেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই আজ ঘর ছাড়া, নিজের পরিবার ছাড়া, চাকরি ছাড়া, তাই তাদের দেখে বিজেপি কর্মীরা দুই ধাপ এগিয়ে এসেও চার ধাপ পিছিয়ে গেছেন। সেজন্যই একান্ত অনুরোধ রেখে বলছি আগে কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা দরকার এবং প্রার্থী নির্বাচন বিধানসভা ভিত্তিক করা দরকার। এটা একান্তই আমার কথা, সিদ্ধান্ত নেওয়া না নেওয়া আপনাদের উপর। দলের বিরোধী কোনো কথা বলিনি, তাই দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না। জয় শ্রীরাম, বিজেপি জিন্দাবাদ। দেশের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জিন্দাবাদ।”
তাঁকে সমর্থন করে রাজর্ষি বিশ্বাস লিখেছেন, “একদম সত্যিটাই বলেছেন। আমি নিজে একজন প্রাক্তন জিলা কার্যকর্তা হয়েও ঘর ছাড়া, রাজ্য ছাড়া।“
অভিজিৎ দত্ত লিখেছেন, “সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের খেয়াদাহ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দাসপাড়া-রূমঝুম মাঠ সংলগ্ন এলাকায় ঘটা গত ২রা মে ২০২১ ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসে পঞ্চায়েত উপপ্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে নৃশংসভাবে খুন হওয়া বিজেপি কর্মী নির্মল মন্ডলের আততায়ীরা এখনো খোলাখুলি স্বমহিমায় ওই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যে ১৯ জন তৃণমূলের গুন্ডাদের নামে নরেন্দ্রপুর থানায় এফআইআর করা হয়েছিল, তারা আজ সকলেই জামিনে মুক্ত হয়ে জমি-জমা ব্যবসায় মাফিয়ারাজ চালাচ্ছে। বিজেপি কর্মীরা এখানে কিভাবে সংগঠন করবে? অনেক বিজেপি-কর্মীই তো এলাকা ছাড়া, আবার অনেকে সুবিধার কথা ভেবে টিএমসি থেকে বিজেপি-তে এসে আবার টিএমসি-তে যোগ দিয়েছে। অথচ গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে গোটা খেয়াদাহ-২ অঞ্চলে বিজেপি-ই এগিয়ে ছিল। অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি না পেলে কর্মীরা কি আর সাহস পাবে পুনরায় বুথ-সংগঠন করতে? বিজেপি-রাজ্য নেতৃত্ব সেইদিকে কি নজর দিচ্ছে?”
আমীর মুর্মু লিখেছেন, “যেদিন বুথ কর্মীদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হবে তখনই সম্ভব। বুথ কর্মীদের সিদ্ধান্ত যেদিন পার্টি নেবে সেদিন সংগঠন মুজবুত হবে। আমরা কয়েকজন যখন এই কাজ করতে যাই, তখন আমাদেরই উচ্চ নেতৃত্ব এর বিরোধিতা করে। তাহলে বুথ কীভাবে সংগঠিত করবেন?“
শ্রীজিৎ দে লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে জয়ী হতে চাইলে রাজ্যের সাম্প্রতিক ইস্যু সমেত স্থানীয় ইস্যুুতে বুথ ভিত্তিক পোস্টারিং এবং ব্যাপক গণআন্দোলনের নির্দেশ দিন। এর ফলে জনগণ মনে করবে সত্যি রাজ্যের বিধানসভার বাইরেও প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অস্তিত্ত আছে। বুথে বুথে ‘মন কি বাত শোনা’ এবং অমুক জয়ন্তী – তমুক জয়ন্তী কর্মসূচি পালনের থেকেও উল্লিখিত পোস্টারিং এবং গনআন্দোলনের প্রভাব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। গণতান্ত্রিক দল বিজেপির জন্য আমার মতামত জানালাম। আমার মতামত পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধির জন্য।কখনোই বিজেপির বিরুদ্ধে না।”
সৌমিত্র সেতুয়া লিখেছেন, “বিজেপির হয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে তৎসহ নিপীড়িত অত্যাচারিত বঞ্চিত মানুষের কিংবা জনগণের স্বার্থে এবং বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে এবং নিজ নিজ বুথে মজবুত এবং সংগঠিত করার লক্ষ্যে যে সমস্ত নিঃস্বার্থ কর্মী কার্যকর্তারা আন্দোলনে শামিল তাদের সাথে যদি রাজ্য, জেলা, মন্ডল নেতৃত্বরা থাকেন তবেই সম্ভব।”
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলীয় নেতার এই পোস্টে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই। বঙ্গ বিজেপির কিছু নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, এভাবে কি দল চলে নাকি? যদিও এই প্রশ্নে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি মুখপত্র সমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল, আমরা আমাদের মতো করে সাজাব। তাতে কারও গায়ে লাগলে লাগবে। কে কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না।’

