সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে কিশোরীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ

স্নেহাশিস মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১ মে: সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে এক কিশোরীকে দিনের পর দিন ধর্ষণের অভিযোগ উঠল নিজের জামাইবাবু এবং স্থানীয় এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে। নদিয়ার রানাঘাট থানার আনুলিয়া হালদার পাড়ার ঘটনা। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে আরও একজনের সন্ধান চলছে।

জানা যায়, ওই কিশোরীর দাদু গাঁজা, মদ বিক্রি করতো। সেই কারণে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম লোকজনের আনাগোনা ছিল ওই বাড়িতে। অভিযোগ, যারা ওখানে গাঁজা খেতে আসত তারাই মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হত। তার মধ্যে একজন ছিল সুবীর বিশ্বাস। গত ২৫ ডিসেম্বর সুবীর বিশ্বাস প্রথমে বাড়ির পাশের একটা জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের পর তার হাতে ৫০ টাকা দেয়। ধর্ষিত হওয়ার পর ওই কিশোরী তার মাকে ওই ৫০ টাকা দিয়ে বিষয়টি জানায়। মেয়েটার কাছ থেকে পয়সা পাওয়ার পর মেয়েটার মা সেই মুহূর্তে ঘটনাটা চেপে যায়। এরপর অভিযুক্ত সুবীর বিশ্বাস প্রায়ই ওই কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য রোজ রোজ আসতে শুরু করে। সেই সময় ওই কিশোরী আতঙ্কে ভয় পেয়ে কখনো পুকুরের পাশে, কখনো ঝোপের মধ্যে, কখনো কারো বাথরুম,পায়খানায় লুকিয়ে পড়তো।

এই ঘটনায় গ্রামবাসীদের মনে সন্দেহ জাগে। ব্যাপারটা জানার জন্য এক মহিলা যখন ওই কিশোরীকে চেপে ধরে তখন সুবীর বিশ্বাসকে দেখিয়ে ওই কিশোরী জানায় ওই লোকটা আমার সঙ্গে জোর করে খারাপ সম্পর্ক করতে চাইছে। পাড়ার লোকেরা ওই কিশোরীর মাকে বিষয়টি বলে। কিন্তু ওই কিশোরীর মা ছেলেটিকে প্রশ্রয় দেয়। কিছুদিন আগে মেয়েটার বমি শুরু হয়। সালিশির জন্য গ্রামবাসীরা জানান তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্যের কাছে। কিন্তু অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্য মেয়েটিকে সাহায্যের বদলে ওই ছেলেটির হয়েই কথা বলেন। এরপরই গ্রামবাসীরা চাইল্ড লাইনের সাহায্য নেয়। অভিযোগ দায়ের হয় রানাঘাট মহিলা থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে সুবীর বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানাতে জিজ্ঞাসাবাদে সুবীর বিশ্বাস জানায় মেয়েটিকে গর্ভবতী করেছে তার নিজের জামাইবাবুই আমি না। মেয়েটির জামাইবাবুর খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পস্কো আইনে মামলা করা হয়েছে।

চাইল্ড লাইন কো-অর্ডিনেটর দেবব্রত কর্মকার জানান, একটা মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ভাবে নিপীড়িত হচ্ছে আমরা গিয়েছিলাম। আমরা প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে কিছু ঘটনা জানতে পারি। এরপর আমরা ওই মেয়েটার বাড়ি গেলে ওনারা প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, অস্বীকার করেন। আস্তে আস্তে কথা বলার পর উনারা ঘটনাগুলো স্বীকার করেন এবং রাজি হন পুলিশে অভিযোগ জানাতে। উনারা আমাদের চাইল্ড লাইনের সাথেই থানায় আসে এবং পুলিশকে গোটা ঘটনা বলে ‌ ওদের অভিযোগের ভিত্তিতে একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আরেক জনের সন্ধান চলছে।

রানাঘাট মহকুমা আদালতের উকিল পৃথু মুখার্জি জানান, অভিযোগ থানায় জানানো হয়েছে। ওখানকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং মেয়েটির জামাইবাবু জড়িত এই ঘটনায়। দুজনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। মেয়েটি এবং মেয়েটির মা যেহেতু অশিক্ষিত সেহেতু এরা সুযোগ নিয়েছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন থেকে ভয় দেখিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে এই ঘটনা এরা করে গেছে, লোকলজ্জার ভয়ে সঠিক সময়ে এরা ঘটনাটা জানাতে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *