রেজিষ্ট্রি বিয়ের পরেও স্ত্রীকে অস্বীকার রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়কের, আইনের দ্বারস্থ স্ত্রী

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ১২ জুন:
আদালতে আইনতভাবে বিয়ে করার পর সাত দিনের মধ্যেই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য উৎপীড়নের অভিযোগ উঠল রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক ডঃ মুকুটমণি অধিকারীর বিরুদ্ধে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন কলকাতা নিবাসী স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী নামে এক মহিলা। ইতিমধ্যে কলকাতার তিলজলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ দায়ের করেন মুকুটমণি অধিকারী, তার বাবা গোপাল অধিকারী এবং ভাই অনুপম অধিকারীর বিরুদ্ধে। বধূ নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, পণের দাবি, সংগঠিত অপরাধ এবং হুমকি সহ বিভিন্ন ধারা উপধারায় কেস দেওয়া হয়।

স্বস্তিকা দেবী জানান, গত ২৮ মে রবিবার দুই পরিবারের উপস্থিতিতে তাদের বাড়িতেই রেজিস্ট্রি করে আইনতভাবে বিয়ে হয় রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে তার। এরপর সেই বিয়ের রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট তিনি হাতে পেয়ে যান ৩১ মে। তিনি বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৪ ধারায় রেজিস্ট্রি করে আইনতভাবে বিয়ে হয় তাদের। এরপরেও সামাজিকভাবে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে তাকে অস্বীকার করছেন মুকুটমণি অধিকারী।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণভাবে দেখাশোনা করেই বিয়ে হয় তাদের। এমনকি বিবাহের প্রস্তাব বিধায়কের দিক থেকেই আসে প্রথম। মুকুটমণি অধিকারীর পরিবারের পক্ষ থেকেই তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর তাদের পরিবার সম্মতি দিলে পরেই মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে আইনতভাবে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয় তাদের। গত ১৩ই মার্চ প্রথম বিয়ের জন্য আবেদন পত্র জমা করেন তারা। এবং গত ২৮ শে মার্চ রেজিস্ট্রি ম্যারেজের সার্টিফিকেটও পেয়ে যান তিনি। তাঁর অভিযোগ, এর পরেই নিজের স্ত্রী হিসেবে তাকে মানতে অস্বীকার করেন মুকুটমণি অধিকারী এবং তার পরিবারের লোকজন।

স্বস্তিকা দেবীর অভিযোগ, তিনি এমএলএলএ হোস্টেল সূত্রে জানতে পেরেছেন মুকুটমণি অধিকারী সেখানে প্রায় দিনই রাতের বেলায় মহিলাদের নিয়ে আসতেন, এবং এই বিয়ের খবর জানতে পারলে তিনি মুকুটমনি অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মুকুটমণি অধিকারী তার সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করেন না। ফোন করলেও ফোন ধরেন না। এবং প্রায়দিনই মুকুটমণি অধিকারীর ভাই অনুপম অধিকারী তাকে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য এবং মিউচুয়াল ডিভোর্সের জন্য চাপ দিতে থাকেন।

তাঁর দাবি, আইনতভাবে বিয়ে করেছেন তাকে মুকুটমনি অধিকারী। মিউচুয়াল ডিভোর্স দিতে তিনি নারাজ। তিনি চান তাকে স্ত্রী হিসেবে তিনি গ্রহণ করুক।

তিনি এও বলেন, সম্ভবত মুকুটমণির সাথে সম্পর্কিত ওই ওই মহিলারা হয়তো আপত্তিজনক ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে, যার ফলে তিনি বাধ্য হয়ে মিউচুয়াল ডিভোর্স দিতে তাদের হাত থেকে বাঁচতে চাইছেন। এবং সম্পর্ক যাতে কোনভাবেই গড়ে না উঠে তার জন্য তিনি এক কোটি টাকা পণের দাবি করেন। তবে তিনি কোনভাবেই মিউচুয়াল ডিভোর্স দিতে রাজি নন।

ইতিমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি। হোয়াটস অ্যাপ ম্যাসেজের মাধ্যমেও তাকে জানানোর চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তার উত্তর পাওয়া যায়নি। তার বাবা এবং ভাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। ইতিমধ্যেই এই গুরুতর অভিযোগের বিষয় নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সর্বত্র।

প্রসঙ্গত, আইনের ছাত্রী হিসেবে ওই মহিলা, কলকাতায় মাকে নিয়েই থাকেন, বাবার মৃত্যুর পর রিয়েল এস্টেট সহ বিভিন্ন ব্যবসা তারা দুজনেই দেখভাল করেন। একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে মহিলাদের প্রতি এই ব্যবহারে, স্বস্তিকা ভুবনেশ্বরী অত্যন্ত ভেঙে পড়েছেন। আক্ষেপের সুরে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানান, বাবার মৃত্যুর পর রিয়েল এস্টেট সহ একাধিক ব্যবসা সামলাতে হয় তাকে এবং তার বৃদ্ধ মাকে। এ ধরনের অমানবিক অনৈতিক আচরণের জন্য তার পরিবারের সম্মানহানির সাথে মা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *