Rampurhat, Court, দুই তৃণমূল কর্মী খু*নে ১২জন কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড, নির্দেশ রামপুরহাট মহকুমা আদালতের

আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, ২১ আগস্ট: দুই তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় ১২জন কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। বৃহস্পতিবার বীরভূমের রামপুরহাট মহকুমা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সন্দীপকুমার কুণ্ডু অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দেন। কারাদন্ডের পাশাপাশি প্রতিটি অপরাধীকে ২ লক্ষ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো ৬ মাস জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বীরভূমের মাড়গ্রাম ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তথা তৃণমূল নেতা ভুট্ট শেখের ভাই লাল্টু শেখ ও তাঁর ছায়াসঙ্গী নিউটন শেখকে বোমা মেরে খুন করা হয়। পরদিন এলাকারই ২০ জন কংগ্রেস ও সিপিএম কর্মীর নামে মাড়গ্রাম থানায় এফআইআর দায়ের করেন নিহত নিউটন সেখের দাদা আমিরুল ইসলাম। পুলিশ ঘটনার রাতেই অন্যতম অভিযুক্ত এলাকার কংগ্রেস নেতা সুজাউদ্দিন শেখকে গ্রেপ্তার করে। পরে পর্যায়ক্রমে সুজাউদ্দিনের দুই ছেলে লাকি ও বাপি, স্থানীয় বাসিন্দা জহির, ফটিক, শফিক, হীরক, আনারুল, আইনাল, গব্বর, আকবর ও ছুট মালকে গ্রেপ্তার করে। বাকিরা ফেরার হয়ে যায়। যদিও ফেরার আটজনের কোনও হদিশ পায়নি পুলিশ। অবশেষে খুনের ঘটনার ৮৬ দিনের মাথায় আটজনকে ফেরার দেখিয়ে বাকি ১২ অভিযুক্তর নামে চার্জশিট দাখিল করেন দুই তদন্তকারী অফিসার। ধৃতদের জেলে রেখেই বিচার প্রক্রিয়া চলে। এর মধ্যে একাধিকবার হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানান অভিযুক্তরা। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। বুধবার বিকেল তিনটে নাগাদ ১২ অভিযুক্তকে সিউড়ি সংশোধনাগার থেকে রামপুরহাট আদালতে নিয়ে আসা হয়।

আদালতে প্রবেশের পথে অন্যতম অভিযুক্ত সুজাউদ্দিন বলেন, “বিনা দোষে আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। এই খুনের ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।” ওইদিন অভিযুক্তদের বিচারকের এজলাসে হাজির করানো হয়। অভিযুক্ত ১২ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। বৃহস্পতিবার ১২ জন অভিযুক্তকেই যাবজ্জীবন কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সাজাপ্রাপ্তদের আত্মীয়, তথা স্থানীয় কংগ্রেস নেতা জাকির হোসেন বলেন, “সম্পূর্ণ বিনা দোষে ফাঁসানো হল। আমরা ন্যায় বিচার চেয়ে উচ্চ আদালতে যাব।”

সরকারী আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খুন, ষড়যন্ত্র, এক্সপ্লোসিভ সহ চারটি ধারায় আসামিদের যাবজ্জীবন সাজা হল। আসামিরা বোমা মেরে দুই যুবককে খুন করেছিল। পরবর্তীকালে এদের কাছ থেকে প্রচুর বোমা পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া এক অভিযুক্ত বোমায় আহত হয়েছিল। তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এক অভিযুক্তের জুতো পাওয়া গিয়েছিল। এসব ফরেন্সিক পরীক্ষায় সাহায্য করে। এছাড়া মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে ধৃতদের যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে খুনের ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। সব দিক বিবেচনা করে বিচারক সাজা ঘোষণা করেন।”

বিভাসবাবুর দাবি, “এলাকা দখলকে কেন্দ্র করেই খুনের ঘটনা ঘটেছে।”

মৃতের দাদা, ভুট্টো শেখ, বলেন, “আমরা ধৃতদের ফাঁসি চেয়েছিলাম। তবে যাবজ্জীবন সাজাতেও আমরা খুশি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *