রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর ১৫৭ তম জন্মদিবস পালন করা হল কান্দিতে

আমাদের ভারত, কান্দি, ২২ আগস্ট: বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাধক ও সাহিত্য আচার্য্য রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর ১৫৭ তম জন্মদিন পালন করা হল যথাযথ মর্যাদার সাথে। সরকারী ভাবে পালিত না হলেও বেসরকারি ভাবে শনিবার পালিত হল মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি গর্ব আচার্য রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর ১৫৭ তম জন্ম দিবস।

শনিবার সকালে কান্দি কোর্ট রোডে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান করেন রামেন্দ্র অনুরাগীরা। মাল্যদান করেন জেমো রামেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগারের সদস্যরা। পরে কান্দি রাজ উচ্চ বিদ্যালয় যে স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন সেই স্কুলে তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করা হয় রামের সুন্দর স্মৃতি পাঠাগারের পক্ষ থেকে। পরবর্তী কালে জেমো নতুনবাড়ি সুতিকা গৃহ ও রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর জন্মভিটেয় ছোট্ট অনুষ্ঠান মধ্যে দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হয়।

গত এক বছর আগে তৈরি হওয়া কান্দি আচার্য রামেন্দ্র সুন্দর স্মৃতি সংগ্রহশালাতে ছোট্ট অনুষ্ঠান মধ্যে দিয়ে এই দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। কোভিড সংক্রমণ মধ্যে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এই দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। বিজ্ঞান ও দার্শনিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী। এই দিনটিকে প্রতিবছর কান্দির বিভিন্ন গ্রন্থাগার ও রামেন্দ্র অনুরাগীরা পালন করেন। জেমো নতুন বাড়িতেও দিনটি পালন করা হয়। যদিও সরকারী ভাবে বছরে ৫২জন মনিষীর জন্মদিন পালন করা হলেও রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর কোনও জন্মদিন পালন করা হয় না। ফলে আক্ষেপ থেকে গেছে আজও। য এই জেলার বহু মানুষ এই ৫ই ভাদ্র দিনটি ভুলতে বসেছেন, আগে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে দিনটি পালন করা হলেও আজ হয় না সেই ভাবে।

১২৭১সালে ৫ই ভাদ্র (ইংরেজি ২২শে আগষ্ট ১৮৬৪) আজকের দিনে জেমো ত্রিবেদী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছোট থেকেই কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। রাজ্য তথা দেশের কাছে বিজ্ঞান আর্দশ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি।

বাংলা ভাষার একজন স্বনামধন্য বিজ্ঞান লেখক। তার পূর্বে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না। উপযুক্ত বইয়ের অভাবই ছিল এর মূল কারণ। তিনি প্রচুর গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেন এবং বক্তৃতার মাধ্যমে বাঙালীদেরকে বিজ্ঞান চর্চায় অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর কোনও মৌলিক গবেষণা বা আবিষ্কার নেই, তবে তিনি মূলত লেখনীর মাধ্যমেই একজন বিজ্ঞানী ও শাস্ত্রজ্ঞের মর্যাদা লাভ করেছেন। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান ছাড়াও তিনি দর্শন ও সংস্কৃত শাস্ত্রের দুর্বোধ্য বিষয়গুলো সহজ বাংলায় পাঠকের উপযোগী করে তুলে ধরেন।

রামেন্দ্রসুন্দর মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার জেমো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম গোবিন্দসুন্দর এবং মা চন্দ্রকামিনী। বাংলা ভাষার চর্চার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন রামেন্দ্রসুন্দর, কিন্তু জন্মসূত্রে তিনি বাঙালী ছিলেন না। তাঁর পূর্বপুরুষরা বন্ধুগল গোত্রের জিঝৌতিয়া ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা রামেন্দ্রসুন্দরের জন্মের দুশো বছর আগে থেকেই মুর্শিদাবাদে বসবাস করতেন। এর ফলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের সকলের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায় এবং এক অর্থে তারা বাঙালীদের মতই বাংলার চর্চা করতে শিখেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সূচনার আগেই ১৮৭৮ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে জেমো রাজপরিবারের নরেন্দ্র নারায়ণের কনিষ্ঠ কন্যা ইন্দুপ্রভা দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

শৈশবকাল থেকেই রামেন্দ্রসুন্দর মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৮৮১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং এর ফলে ২৫ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন এবং একটি স্বর্ণপদক ও বৃত্তি পান। একই কলেজ থেকে ১৮৮৬ সালে বিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র এফএ পরীক্ষা ছাড়া জীবনের অন্য সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পরীক্ষায় বিজ্ঞানশাস্ত্রে স্বর্ণপদক ও পুরস্কারসহ প্রথম স্থান পান এবং ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি পান।১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে রিপন কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক হন। পরেপ্রথমে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী অধ্যক্ষ এবং শেষে স্থায়ী অধ্যক্ষ হন। ২৩শে জৈষ্ঠ্য ১৩২৬ সালে ইংরেজি ৬ই জুন ১৯১৯ সালে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী ইহলোক ত্যাগ করেন।

কিন্তু এই বিজ্ঞান সাধক আচার্য রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী জন্মদিন সরকারী ভাবে পালিত না হলেও বেসরকারি ভাবে শনিবার পালন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *