আমাদের ভারত, ১৭ জুন: রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিন থেকেই জেলায় জেলায় চুড়ান্ত অশান্তি ও একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এই সন্ত্রাসের নেপথ্যে রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বলে সরব সব বিরোধীরাই। হিংসাত্মক ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। শনিবার রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই বিষয়ে আলোচনার জন্য রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান। বৈঠকের পর বেরিয়ে এসে সুকান্ত সাংবাদিকদের সামনেই দাবি করেন, রাজ্যপাল নিজেও বুঝতে পেরেছেন ভোটের মনোনয়ন পর্বে অশান্তি ঘটানো দুর্বৃত্তদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে।
শনিবার রাজভবনে রাজ্য পালের সঙ্গে দেখা করতে যান বঙ্গ বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দীর্ঘক্ষণ তাদের বৈঠক চলে। বৈঠকের পর সুকান্ত জানান, বৈঠকে তিনি রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে শাসক দল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীরা খুন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তার আরও অভিযোগ ছিল, বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। এমনকি মনোনয়ন কেন্দ্রে পর্যন্ত অশান্তি সৃষ্টি করে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই মুহূর্তে তার সব চেয়ে বড় অভিযোগ, বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
একই সঙ্গে সুকান্ত মজুমদার জানান, রাজ্যজুড়ে ভোটে অশান্তির ঘটনায় যে তৃণমূল কংগ্রেস জড়িত রাজ্যপালও এ বিষয়ে বিরোধীদের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একমত। সুকান্ত দাবি করেছেন, “পঞ্চায়েত ভোটে যে সন্ত্রাস চলছে তা নিয়ে আমি রাজ্যপালকে জানিয়েছি। তিনি নিজেও পঞ্চায়েত ভোট পর্বে দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করার প্রমাণ পেয়েছেন। সেই দুর্বৃত্তদের সঙ্গে যে তৃণমূল নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে তারও তিনি প্রমাণ পেয়েছেন।”
এরপর সুকান্ত আরো বলেন, “রাজ্যপাল নিজেই সন্ত্রাস কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাকে তৃণমূল নেতৃত্বেদের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের যে সরাসরি যোগ রয়েছে তা বলেছেন।”
সুকান্ত জানান, “সেইসব নাম আমাকে তিনি জানালেও আমি মিডিয়ার সামনে বলতে পারব না। রাজ্যপাল সময় হলে সে নাম নিজেই প্রকাশ্যে আনবেন।”
মঙ্গল এবং বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নকে ঘিরে প্রবল অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মীও খুন হয়েছেন। পুলিশের সামনেই বোমাবাজি গোলাগুলি চলেছে নির্বিচারে। পুলিশ কিছুই করেনি বলে বারবার অভিযোগ জানিয়েছে বিরোধীরা। বিরোধী গোষ্ঠীকে এলাকা ছাড়া করতে ভয় দেখানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এই সব অশান্তির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুক্রবার নিজেই ভাঙড়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস।সেখানে তিনি স্থানীয়দের সাথে কথাও বলেছেন। এরপর সংবাদ মাধ্যমকে রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, ভাঙড় সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হওয়া অশান্তি কখনোই কাম্য নয়। শান্তি ফেরাতে সবরকম ব্যবস্থাই রাজভবন করবে।
এরপর শনিবার সকালে রাজ্যপালের দ্বারস্ত হন সুকান্ত। তাঁর অভিযোগ ছিল, বসিরহাট সহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক প্রান্তে বিজেপি সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ওপর মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ তৈরি করছে শাসক দল। একইসঙ্গে লাগাতার সন্ত্রাস চালাচ্ছে তারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুকান্ত দাবি করেন, পুলিশকে দিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। তাঁর আরও দাবি, সেক্ষেত্রে পুলিশকে লক্ষ্য মাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, ২০ হাজার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের লক্ষ্য মাত্রা জেলায় জেলায় এসপির মাধ্যমে পুলিশকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত সপ্তাহে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন শুরু হওয়ার পর রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিজেপি সভাপতি। তখনো সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে।