সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৯ অক্টোবর: বাঁকুড়ার কালীপূজা বৈচিত্রে ভরা। কোথাও বিপ্লবীদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রমান বহন করে তো কোথাও মানুষে মানুষে মেলবন্ধনের কথা তুলে ধরে। বিপ্লবীদের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন ও জনপ্রিয় কালী মায়ের মন্দির রয়েছে শহরের বড়কালীতলায়। প্রতিদিন মায়ের আর্শিবাদ কামনা করে শতাধিক মানুষ পুজো দেন সেখানে। বাঁকুড়াবাসীদের কাছে ‘বিপ্লবী’ বাড়ির কালী বা বড়কালী মা নামেই পরিচিত।

কথিত আছে সাড়ে ৪০০ বছরেরও আগে রঘুডাকাতের হাতে শুরু হয়েছিল এই পূজা। এই কালী মন্দিরের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামী এমনকি আলিপুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত বিপ্লবীরা এই কালী মায়ের সামনে, গীতা ও মন্ত্র পাঠ করতেন, বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষা নিতেন ও শক্তি – সাহস পাওয়া জন্য সাধনা করতেন। এই বড় কালীতলা মন্দিরের কাছে থাকা একটি বাড়ি ছিল বিপ্লবী ও অনুশীলন সমিতির গোপন আস্তানা। সেই সূত্রে বাংলার অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের আনাগোনা ছিল এই বাড়িতে। বৃটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দিনের পর দিন তারা গা ঢাকা দিয়েছেন এই বাড়িটিতে। বাড়ির ভিতরের একটি গুপ্ত কক্ষে রাখা থাকত বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র। জরাজীর্ণ সেই বাড়ি এখন নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এই মন্দিরে বংশানুক্রমে পুজো করে আসছেন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরাই। তান্ত্রিক মতে পুজো হয় মায়ের। কালী পুজোর সময় পুজো দেওয়ার লম্বা লাইন পড়ে। বহু ভক্ত তাদের মনোকামনা পূরনের জন্য মানত করেন, সেই মনোকামনা পূরনের পর তারা ছাগ বলি দেন। পুজো শেষে সেই বলিদান দেখতে বহু মানুষের ভিড় জমে। কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে এসে ভক্তরা মায়ের দর্শনের পাশাপাশি স্বদেশী বিপ্লবীদের অস্তিত্ব যেন অনুভব করেন।

