নিজেদের মাওবাদী প্রমাণ করে চাকরি ও প্যাকেজ চাওয়ার হিড়িক

জে মাহাতো, মেদিনীপুর, ১১ অক্টোবর: জঙ্গলমহলের মানুষ এতদিন তাদের উপর মিথ্যা মাওবাদী তকমা চাপানোর অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন। সেই জঙ্গলমহলেরই একদল মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গল মহল সফরের পর এখন সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য নিজেদের মাওবাদী প্রমান করতে চাইছেনl তারা বলছেন, আমরাও তো মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলামl ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জঙ্গলমহলে নির্বিচার মানুষ খুনের দল মাওবাদীদের অনেকেই আত্মসমর্পন করে সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজ পেয়েছে৷ টাকার সঙ্গে জুটেছে চাকরি।

৬ ও ৭ অক্টোবর খড়্গপুর ও  ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভাতে মাওবাদী হানায় নিখোঁজদের পরিবারকে প্যাকেজ বিলি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মাওবাদী এলাকার জুনিয়ার কনস্টেবলদের  কনস্টেবল পদে উন্নীত করেছেন৷ 

এরপরই জঙ্গলমহলের কিছু মানুষ নিজেদের প্রাক্তন মাওবাদী দাবি করে একই প্যাকেজের দাবি তুলেছেন। তাঁরা প্যাকেজ না পেলে আন্দোলনে নামার কথাও জানিয়েছেন l

বুধবার জঙ্গলমহল সফর শেষ করে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ফিরে যাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর সদর ব্লকের ডুমুরকোটা গ্রামের পাশের জঙ্গলে সভা করে এরকমই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেদের মাওবাদী ও মাওবাদীদের লিংক ম্যান হিসেবে দাবি করা একটি দল ৷ তাঁদের দাবি মাওবাদী সংযোগ থাকায় তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাওবাদী ধারায় একাধিক মামলা ঝুলছে। কেউ কেউ জেলও খেটেছেন। তাঁরা সেই মামলার কাগজপত্রও মজুদ রেখেছেন। সেই নথির ভিত্তিতেই তাঁরা প্যাকেজ চেয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। 

সদর ব্লকের শিরশী গ্রামের তারাপদ মাহাত বলেন, ” মাওবাদী পর্বে মাওবাদীদের সংগে সরাসরি যুক্ত থাকায় পুলিশের খাতায় মাওবাদী হিসেবে আমার নাম রয়েছে। অনেক  মাওবাদী মামলায় আজও ভুগছি l তৃনমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মামলা তুলে নেওয়ার  , কিন্তু আজও তুলে দেয় নি ৷ অন্যদিকে প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল l কিন্তু পাওয়া যায়নি  ৷ আজ অন্যরা পাচ্ছে দেখছি,তাই আমরাও আবেদন রাখছি আমাদেরও চাকরি এবং প্যাকেজ দেওয়া 

হোক ৷”

 ডুমুরকোটা গ্রামের বাসিন্দা সুবোধ মাহাতোরও একই দাবি, “২০০৮ সাল থেকেই আমি মাওবাদী স্রোতে ছিলাম। যে কারনে  বিভিন্ন মামলাতে আমাকে যুক্ত করা হয়েছে। লালগড় ও কোতয়ালি থানাতে ৫টি মামলা আজও চলছে ৷ আমরা চাই দিদি আমাদের এই মামলা সরিয়ে দিক, সেই সাথে আমাদেরও প্যাকেজ দিন ৷”

যদিও মণিদহ গ্রামপঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঞ্জন বেরা বলেন, মাওবাদী পর্বে তাদের চাপে গ্রামের বেশিরভাগ লোকজনকেই তাদের সঙ্গতে বা সভাতে যেতে হয়েছে ৷ তাহলে গ্রাম কে গ্রাম চাকরী দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই ৷ সবটাই তদন্ত করে পুলিশের এগোনো উচিত ৷ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলার পুলিশ কর্তারা। বিষয়টিকে বেশ মজার সংগে দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে এখন পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলমহলে কারা মাওবাদী ছিল এবং মানুষ খুন করেছিল। খোঁজ নিলে দেখা যাবে আসলে এরা সবাই তৃনমূল। এরাই বলেছিল, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে বাংলার ভূগোল বদলে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *