আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ১০ জানুয়ারি: বেসরকারি কোম্পানির হয়ে বাড়ি বাড়ি মহিলাদের মধ্যে মোবাইল এবং ইন্টারনেট সচেতন করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লেন এক মহিলা। তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে বিক্ষোভের মুখে পড়েন বিডিও। পরে নলহাটি থানার পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। আপাতত কয়েকদিন তাঁকে গ্রামের বাইরে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, টাটা ট্রাস্টস এবং গুগুল যৌথভাবে গ্রামের মহিলাদের মধ্যে মোবাইলে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। তারা প্রকল্পের নাম ‘ইন্টারনেট সাথী’ রেখে ব্লক ভিত্তিক মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের গ্রামে গ্রামে পাঠিয়েছে। সেই মতো মুর্শিদাবাদ সীমান্তের বীরভূমের নলহাটি থানার কুমারসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা দিলারা পারভিন চারটি গ্রামে কাজের দায়িত্ব পান। গ্রামগুলি হল সাইলমাইল, কুমারসন্ডা, সেনপাড়া ও সালিসন্ডা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে দিলারা পারভিন নিজের গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। তাদের নাম ঠিকানা নথিভুক্ত করছিলেন। গ্রামবাসীরা মনে করেন এনআরসি করার জন্য ওই মহিলা তথ্য সংগ্রহ করছে। এরপরেই তাকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। অনেক রাত পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার দিলারার বাড়িতে গিয়ে গ্রামবাসীরা বিক্ষোভ দেখান। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় গ্রামে যান নলহাটি ২ নম্বর ব্লক আধিকারিকরা। গ্রামবাসীরা তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। পরে নলহাটি থানার পুলিশ গিয়ে দিলারাকে উদ্ধার করে।
গ্রামের বাসিন্দা হাসনেআরা বিবি, গুলসানা বিবিরা বলেন, “তিনমাস ধরে কাজ করছে ওই মহিলা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোবাইল হাতে দিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে। আধার কার্ডের ছবি তুলছে। আমাদের সন্দেহ হয় যে এনআরসির সার্ভে করছে। তাই আটকে রেখেছিলাম।”
দিলারা বলেন, “আমি নলহাটি ১ নম্বর ব্লকে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ি বাড়ি মোবাইল প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলাম। কিভাবে মোবাইল চালাতে হয়, ইন্টারনেট চালাতে হয়। এসব প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলাম। আমাদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোবাইল দিদি’। প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর একটা ফর্ম পূরণ করা হচ্ছিল। তাতে ওই মহিলা কতটা শিখলেন তা লেখা হয়। আমি প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই। সন্ধ্যার দিকে কিছু লোক আমার বাড়িতে গিয়ে ধাক্কা দেয়। আমি বেরিয়ে আসতেই আমাকে গালিগালাজ করে। শুক্রবার সকালে ফের আমার বাড়িতে চড়াও হয়। অশ্রাব্যভাষায় গালিগালাজ করে। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।”
নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের বিডিও হুমায়ূন চৌধুরী বলেন, “বেসরকারি কোম্পানির হয়ে ওরা কাজ করছে। কিন্তু এখন যেহেতু এন আর সি একটা গণ্ডগোল চলছে, সেহেতু মানুষ ভেবেছে সেই সার্ভে হচ্ছে। গুজবের জন্যই এটা হয়েছে। আমরা গ্রামে গিয়ে মানুষকে সচেতন করব।”