Factory, Mejia, দূষণে পরপর মৃত্যুর অভিযোগ, মেজিয়ায় কারখানার সামনে বিক্ষোভ, ময়নাতদন্তে বাধা

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ অক্টোবর: মেজিয়া শিল্পাঞ্চলে পরপর দু’ জনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।ইথানল তৈরির ওই কারখানার গেটের সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বাসিন্দারা। মেজিয়া শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন স্পঞ্জ ও ফেরো অ্যালয় কারখানাগুলির বিরুদ্ধে গত ২ দশক ধরে দূষণ সহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।

গত বছর তিনেক আগে মেজিয়ার অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি ইথানল তৈরির কারখানার উৎপাদন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই অভিযোগ ছিল, ওই কারখানা থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গত হচ্ছে এবং তাতে এলাকাবাসীর জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গত বুধবার এক যুবক ও এক গৃহবধূর মৃত্যু ওই কারখানার বিরুদ্ধে ঘৃতাহুতি পড়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত স্থানীয় লালবাজার গ্রামের দু’জনের মৃত্যু কারখানার দূষণ জনিত কারণেই হয়েছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলে বুধবার সন্ধ্যা থেকে কারখানার গেটের সামনে অবরোধ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। মেজিয়া থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে বিক্ষোভকারীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরপর দুটি মৃত্যু ও গ্রামের আরো বেশ কিছু মানুষ হঠাৎ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বেশ কয়েক ঘন্টা কারখানার দরজা আটকে বিক্ষোভ চলতে থাকে।

লালবাজার গ্রামের বাসিন্দা রমজান খান, পার্শ্ববর্তী ঘুষড়া গ্রামের হাসিবুল শেখ বলেন, মঙ্গলবার এক যুবক ও বুধবার এক মহিলার হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এবং ১৫ /১৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের মেজিয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করে চিকিৎসা চলছে। তাদের দাবি, ওই কারখানার দূষণ থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। কয়েক কিমি ব্যসার্ধের মধ্যে ৮ /১০ খানা গ্রামের মানুষ ওই কারখানার দুর্গন্ধে টিকতে পারছেন না। কারখানার দূষিত বর্জ্য জল বর্ষার আগে একটি পুকুরে ঢুকে পড়লে কয়েক লক্ষ টাকার মাছ মরে ভেসে ওঠে। তখনও এইভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষ দূষণ নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

এই ঘটনার পর গ্রামে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে বলে জানান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সোরেন। তিনি বলেন, কী কারনে মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক কারণ জানতে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত জরুরি। কিন্তু এখানের মৃতদের ময়নাতদন্ত করাতে চাননা তাদের পরিবার। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত না করিয়ে কী করে মৃতদের শেষকৃত্য করা হবে সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি জানান, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ময়নাতদন্ত করানোর ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা শাসক সিয়াদ এন বলেন, কী কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তা জানতে স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হয়েছে।

অর্ধগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান চাঁপা সাহা মন্ডল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই কারখানার বিরুদ্ধে দূষণ সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক আধিকারিক জানান, দূষণ নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *