Deputation, Kolaghat, দেহাটি ও সোয়াদিঘি খাল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার স্থায়ী জলনিকাশী সমস্যা সমাধানের দাবি, বিডিও অফিসে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ২৯ আগস্ট: কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক, সিদ্ধা-১ ও ২, খন্যাডিহি, পুলসিটা, সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৫০টি গ্রামের দীর্ঘদিনের জলনিকাশী সমস্যার সমাধানে গত ১৯৭৫ সালে ‘দেনান-দেহাটি জলনিকাশী প্রকল্প’ রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল-সেচ দপ্তর। কিন্তু আজও তা পূর্ণাঙ্গভাবে রূপায়িত না হওয়ায় গত আষাঢ় মাস থেকে লাগাতার বর্ষণে জলবন্দি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে উত্তর জিঞাদা, শ্রীধরবসান, দেউলবাড়, কয়াআয়মাচক, বাঁকাডাঙ্গা, পরমানন্দপুর, কয়াডাঙ্গী, বক্সীতলা, আমিরচক, গোবিন্দচক সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের নিচু এলাকার রাস্তায় জল জমে রয়েছে। উত্তর জিঞাদা দিগম্বরী, শ্রীধরবসান, বাঁকাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুল সহ কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি স্কুল যাওয়ার রাস্তা জলমগ্ন হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি অনেক কমে গিয়েছে।

অন্যদিকে ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ সোয়াদিঘি ও জঁফুলি খাল পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়ায় খাল সংলগ্ন দেড়িয়াচক, ভোগপুর, সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ অংশেও জলবন্দি পরিস্থিতি রয়েছে। ফলস্বরূপ চলতি খরিফ মরশুমে আমন ধানের চাষ প্রায় কোন এলাকাতেই হয়নি। যেখানে ওই চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল তাও জলের তলায় চলে গেছে।ফুল, সব্জি ও মাছ চাষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।

তা সত্বেও দু’ মাসেরও বেশি সময় পরও ব্লক ও সেচ দপ্তর কার্যত কোনো পদক্ষেপ না করায় জলবন্দি পরিস্থিতির প্রায় কোনো উন্নতি না হওয়ায় উপরোক্ত সমস্যা সমাধানে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ ও সোয়াদিঘি খাল সংস্কার সমিতির পক্ষ থেকে আজ ২৯ আগস্ট বিডিও অফিসে বিক্ষোভ অভিযানে সামিল হন প্রায় ৩ শতাধিক মহিলা সহ জলবন্দি মানুষজন। ওই পরিপ্রেক্ষিতে সেচ দপ্তরের তমলুক, পাঁশকুড়া-১ ও ২ সাব ডিভিশনের এসডিও এবং কৃষি দপ্তরের সহ অধিকর্তা’র নিকটও ডেপুটেশন ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক, সভাপতি গোপাল সামন্ত, সহ-সম্পাদক সুদর্শন খাটুয়া, মোহন দাস, সোয়াদিঘি খাল সংস্কার সমিতির সম্পাদক মধুসূদন বেরা, সহ সম্পাদক নিবাস মানিক, মধুসূদন সামন্ত, প্রশান্ত সামন্ত প্রমুখ। সেচ দপ্তরের পক্ষ থেকে নাজেশ আফরোজ, সৈনভ সিনহা, সুমিত দাস ডেপুটেশন গ্রহণ করেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুরজিত মান্না স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। কৃষি দপ্তরের পক্ষে এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসার মলয় সামন্ত স্মারকলিপি নেন।

ডেপুটেশনের প্রতিনিধি দলের পক্ষে নারায়ণবাবু জানান, যে স্থানগুলিতে জল অবরুদ্ধ হচ্ছে, সেই স্থানগুলি আগামীকাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সেচ দপ্তরের এসডিও, পরিষদের নেতৃত্বদের উপস্থিতিতে পরিদর্শন করা হবে এবং তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও সোয়াদিঘি খাল সংস্কার সমিতির সম্পাদক মধুসূদন বেরা অভিযোগ করেন, বর্ষার পূর্বে এলাকার সোয়াদিঘি ও দেনান খাল সংস্কার শুরু হলেও কাজের গতি খুবই শ্লথ। গুরুত্বপূর্ণ দেহাটি, চাপদা-গাজই, খড়িচক প্রভৃতি খালগুলি সংস্কারে এখনো হাত দেওয়া হয়নি। সর্বোপরি “নো কষ্ট” পদ্ধতিতে ওই নিকাশী খালগুলি কতটা ও কতদিনের মধ্যে সংস্কার হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে যথেষ্ট সংশয়।

নারায়ণবাবুর আরো অভিযোগ, উপরোক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও পানশিলায় দেহাটি ব্রিজের পিলারের বেড়িগুলি না ভাঙ্গার কারণে ও বরদাবাড় সহ কয়েকটি জায়গায় জলস্তরের কাছাকাছি পি এইচ ই’র পাইপলাইন থাকায় এবং মাঠের মধ্যে বেআইনি ভেড়ি গড়ে ওঠা সহ খালের ভেতরে বেআইনি নির্মাণ থাকায় জল ঠিকমত নিকাশী হতে পারছে না। এমনকি নিকাশী খালগুলির যে যে জায়গাগুলিতে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানেও ক্রশবাঁধগুলি পূর্ণাঙ্গরূপে ঠিকমত পরিষ্কার করা হয়নি। সে কারণে দু’ মাসেরও বেশি সময় ধরে এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়ে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *