পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১১ অক্টোবর: ফেন্সিডিল ও গোরু পাচারের কালো টাকা সাদা করতে বালুরঘাটে দিন দিন বাড়ছে প্রোমোটারের দৌরাত্ম্য। পরোয়া না করে রাতের অন্ধকারে কোটি কোটি টাকার জমি বেনামে কিনছেন হিলি ও ত্রিমোহিনীর কুখ্যাত পাচারকারীরা। চলছে নিজেদের কুকীর্তি ঢাকতে প্রশাসনিক আধিকারিকদের মুখ বন্ধ করবার প্রক্রিয়াও। আর এর জেরেই শহরের একাধিক জায়গায় নামে-বেনামে ফ্ল্যাট কিনছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। পিছিয়ে নেই শাসক দলের একাংশ নেতারাও।
এদিকে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে পাচারকারীরা রাতে কেন্দ্র ও দিনে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা দলের লোক হিসাবে পরিচয় দিয়ে নেতাদের একাংশ মাসোহারা দিয়ে সমঝোতা করে চলছেন। পুজোর আগে জেলায় ইডি ও সিবিআই হানার গুজব ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল সেইসব পাচারকারী ও একাংশ রাজনৈতিক নেতাদের কপালে। নামে ও বেনামে কেনা সম্পত্তির মালিকানা ঠিক করতে যেন কার্যত ঘুম উড়েছিল তাদের।
দক্ষিণ দিনাজপুরের ২৫২ কিলোমিটার বর্ডার এলাকার মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা আজও কাঁটাতারবিহীন। যা উন্মুক্ত সীমান্ত হিসাবেই পরিচিত। এর বেশিরভাগ অংশই হিলি এলাকাজুড়েই অবস্থান করছে। যার মধ্যে জামালপুর, মথুরাপুর, দুর্গাপুর, ভীমপুর, ঘুনসি সহ বেশকিছু এলাকা আজও রাতের অন্ধকারে একপ্রকার পাচারকারীদের দখলেই থাকে। রাত হলেই সেইসব উন্মুক্ত সীমানা দিয়ে চলে দেদার ফেন্সিডিল, গোরু, সোনা ও জাল টাকার মতো কারবার। আর এইসব কারবারে যুক্ত প্রত্যেক পাচারকারীই নিজেদের ছদ্মনামে এলাকায় পরিচিত। সাজু, মোটাভাই, ডাকাত, চানু, সিনু, বিনু, টাকলা, পটলা সহ একাধিক ছদ্মনাম রাতের অন্ধকারে ব্যবহার করে পাচারকারীরা। কিন্তু সকাল হতেই তাদের চেনা বড় দায় হয়ে যায়। কেননা ওই পাচারকারীরা প্রত্যেকেই নামি দামী কোম্পানির গাড়ি ও পোশাক পরে দিনের আলোতে শরনাপন্ন হন কোনো না কোনো রাজনৈতিক নেতার। যাদের ছত্রছায়ায় অনেক পাচারকারী আবার ছোট খাটো রাজনৈতিক পদেও অলংকৃত হয়েছেন ইতিমধ্যে। প্রতিরাতে সেইসব পাচারকারীদের কোটি কোটি কালো টাকা চলে আসে শহরে। চলছে রাতের অন্ধকারে নামে-বেনামে জমি কেনার হুড়োহুড়িও। আর সেখানেই গড়ে উঠছে বড় বড় ইমারত।
বালুরঘাট শহরজুড়ে এই প্রোমাটারি ব্যবসা বিগত কয়েকবছর আগে শুন্য থাকলেও সেই সংখ্যা বর্তমানে একশোকেও ছাড়িয়েছে। আর যে তালিকায় রয়েছে হিলি ও ত্রিমোহিনীর কুখ্যাত পাচারকারীরা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠা এইসব ইমারতের মালিক হিসাবে সামনে দু একজন নিরীহ লোককে দাঁড় করিয়েই চলছে পাচারকারীদের কালো টাকা সাদা করবার প্রক্রিয়া। যে বিষয়গুলি প্রকাশ্যে না আনবার জন্য বিভিন্ন পুলিশ কর্তা ও প্রশাসনিক কর্তারা রাতারাতি উপহার পাচ্ছেন ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট ও মোটা টাকার প্যাকেট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রিমোহিনীর এক পাচারকারী বলেন, হিলি পাচারের জায়গা হিসাবেই চিহ্নিত। এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীর টাকা শুধু বালুরঘাট নয় অনান্য জায়গার প্রোমোটারি ব্যবসাতেও খাটছে। যার দরুন সকলের কালো টাকা সাদা হয়। তবে নেতা ও পুলিশের সাথে সমঝোতা না থাকলে জেলেই পচতে হবে। তাই তারা দিনে এক পার্টি করেন এবং রাতে অপর পার্টি করেন।
সীমান্ত এলাকার দুই বাসিন্দা সন্তোষ সরকার ও রাজু পাহানরা বলেন, রাত হলেই পাচারকারীদের তান্ডব শুরু হয় তাদের এলাকায়। রাতভর যারা সীমান্তের তার কাটে, দিনের আলোতে তারাই নামিদামি গাড়ি নিয়ে চকচকে পোশাক পরে ঘুরে বেড়ান। যাদের কোটি কোটি টাকা শহরের বিভিন্ন ব্যবসার অন্যতম মূলধন।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা সেভাবে কিছু বলতে না চাইলেও তারা বলেন, এধরনের খবর তাদের কাছেও আছে। বিষয়টির উপর নজর রয়েছে তাদের।