আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ২২ সেপ্টেম্বর: সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ৪৮ ঘণ্টা গণঅনশন ও গণঅবস্থান শুরু করল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে, “সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং থেকে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলেই বাধ্য হয়ে আমরা ৪৮ ঘণ্টার অনশনে বসেছি। আমরা আশা করতে চাই, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শহিদ মিনারে এসে আমাদের অনশনের সাথে সংহতি জানাবেন।
এ্যাড. দাশগুপ্ত শারদীয় দুর্গাপূজার আগে প্রতি বছরের মতো এবারও মূর্তি ভাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ২০২১ সালের শারদ সন্ত্রাসের সময় গ্রেফতার হওয়া সহিংসতার সূচনাকারী কুমিল্লার ইকবালকে যদি পাগল না সাজিয়ে যথাযথ বিচার ও সাজার মুখোমুখি করা হতো, তাহলে এতো মূর্তি ভাঙ্গা, মন্দির ভাঙ্গার ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। আমরা ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ও পূজার আগে-পরে নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।
আসন্ন দুর্গাপূজার সময় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দল আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন না, আমরা তাদের বন্ধু মনে করবো না।
প্রেস ব্রিফিংয়ে রাণা দাশগুপ্ত সাড়ে চার বছরের বেশি সময়েও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আরেকটি সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায় এসে গেলেও বিগত নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ না করা দুর্ভাগ্যজনক। সদিচ্ছা থাকলে আগামী মাসে সংসদের শেষ অধিবেশনে এবং কিছু নির্বাহী আদেশে দ্রুততম সময়ে এসব অঙ্গীকার পূরণ করা সম্ভব।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এ্যাড. দাশগুপ্ত জানান, চলতি অনশন কর্মসূচির পরে সরকারের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে আগামী ৬ অক্টোবরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন সহ সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে এই অনশন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আজ ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে কর্মসূচি শুরু হয়েছে, শেষ হবে ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার ভোর ৬টায়।
গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও প্রাক্তন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।
এছাড়া প্রথম দিনের কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড: নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, জয়ন্ত সেন দীপু, অধ্যাপক ড: জিনোবোধি ভিক্ষু, রঞ্জন কর্মকার, মিলন কান্তি দত্ত, যোসেফ সুধীন মণ্ডল, বাসুদেব ধর, মঞ্জু ধর, জয়ন্তী রায়, এ্যাড. বিকাশ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড. তাপস কুমার পাল, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ বসু, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোরাইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (প্রভাষ-পলাশ) সভাপতি প্রভাষ বিশ্বাস, নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, হিন্দু মহাজোটের (এমকে) সভাপতি এম কে রায় প্রমুখ।