স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ২০ মে:
সারা বিশ্ব যখন করোনা সমস্যায় জর্জরিত ঠিক তখনই করোনা প্রতিরোধে ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন নদীয়ার যুবক চিকিৎসক বিজ্ঞানী প্রীতম সুকুল। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন বিষয়ক পরামর্শদাতা প্যানেলের সদস্যও এই বাঙালি বিজ্ঞানী।
মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি পরিচিতি। বাবা বরুণ শুকুল ব্যসায়ী। মা কণিকা শুকুল জানান, প্রীতম সাত বছর জার্মানীতে আছে। ওখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন।
আমাদের ভারতের পক্ষ থেকে জার্মানীতে ফোন করে জানতে চাইলাম করোনা থেকে কি সারাবিশ্ব আদৌ মুক্তি পাবে? ওপার থেকে জবাব এলো ‘উত্তর জানা নেই’। তবে সারা বিশ্বে করোনা প্রতিরোধক তৈরীর চেষ্টা চলছে। নিশ্চিত সাফল্য আসবেই’। তিনি জানান উপসর্গহীন আক্রান্ত অর্থাৎ যাদের চিহ্নিত করতে ভারত সরকারও হিমশিম খাচ্ছে তাদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। জানান এক্সিলেন্ট বায়ো মার্কার অ্যানালিসিস করে এইসব রোগীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের শরীরে জৈব প্রক্রিয়ার ফলে তৈরি হয় উদ্বায়ী জৈব পদার্থ। সেগুলি ফুসফুসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তারই ঘনত্বের পরিবর্তন বিচার করে সংক্রমনের গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা চলছে। ইউরোপের আটটি দেশ এই গবেষণায় শামিল। আমি তার প্রধান বিজ্ঞানী’।
প্রথমস্তরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পরবর্তী
স্তরে ভারত তথা রাজ্যের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থা এবং হাসপাতালকেও এই প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। সর্বভারতীয় স্তরে এই কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রের পাশাপাশি আমাদের রাজ্য সরকারের সঙ্গে অদূর ভবিষ্যতে যোগাযোগ করবেন তিনি।
রাজ্যে মৃত্যুর হার অধিক এবিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান, “অযথা এত উত্তেজিত হবেন না। মৃত্যুর হার বহু প্যারামিটারের ওপর নির্ভর করে। পরীক্ষার সংখ্যা, পজিটিভ কেস এর সংখ্যা, কমিউনিটি ইত্যাদি। তিনি বলেন, কভিডের ফলে মৃত্যু আর কভিডের সাথে মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের রাজ্যে যেহেতু দুই সংখ্যাকে একসঙ্গে প্রকাশ করছে তাই আমি এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। এরফলে পজিটিভ কেস এবং ভাইরাসটিই বুঝতে সুবিধা হবে বিজ্ঞানীদের।
ছবি: জার্মানির ল্যাবরেটরিতে কাজ করছেন প্রীতম সুকুল।
তবে এ কাজে মানুষকে ধৈর্য ধরার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন আমাদের নিজেদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের জন্য। কেন্দ্রীয় সরকারের লকডাউন বিধি নিষেধ, খুব প্রয়োজনে বাইরে বেরোলে মুখে মাস্ক পড়তে এবং সর্বোপরি পুলিশ, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেন। তিনি জানান, তারা ২৪ ঘন্টা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু কোথাও কোথাও শোনা যাচ্ছে ডাক্তার এবং নার্সদের ডিউটির পর নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে, এই ঘটনা সভ্য সমাজে কখনোই কাম্য নয়। একবার ভেবে দেখেছেন যদি ডাক্তার বা পুলিশ একদিনের জন্য বসে যায় কোনও কাজ না করে তাহলে আমাদের কি হবে? প্রত্যেকের জানা উচিত এরাও আমাদের পরিবারের সদস্য। পাশপাশি তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান, আমরা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চেষ্টা চালাচ্ছি এই মরণ ভাইরাস থেকে বিশ্বকে বাঁচানোর প্রতিষেধক আবিষ্কার করার জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা লক্ষ্যে পৌছব।