Modi, BJP, তাহেরপুরের সভা থেকে ভার্চুয়ালি পশ্চিমবঙ্গকে মহাজঙ্গলরাজ থেকে মুক্ত করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আমাদের ভারত, ২০ ডিসেম্বর: কুয়াশার কারণে প্রধানমন্ত্রীর চপার তাহেরপুরে অবতরণ করতে পারেনি। তাই ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী, আর সেখানেই পশ্চিমবঙ্গকে মহাজঙ্গল রাজ্য থেকে মুক্ত করার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে মানুষের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, বিজেপিকে একটা সুযোগ দিন। ডাবল ইঞ্জিন সরকার এলে উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে রাজ্যে বলে দাবি করেন তিনি।

জয় নিতাই বলে আজকে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলায় বলেন, বড়রা প্রণাম নেবেন, সকলকে শুভেচ্ছা। ক্ষমা চেয়ে নেন খারাপ আবহাওয়ার কারণে মানুষের কাছে তাঁর পৌঁছাতে না পারার জন্য। তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে কপ্টার নামার পরিস্থিতি ছিল না, তাই টেলিফোনে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি।

এরপরই তিনি নদীয়ায় সড়ক পরিবহন উন্নত করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, এখানকার মানুষ অনেকদিন বঞ্চিত ছিলেন। সড়ক তৈরি হওয়ায় নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার মানুষের লাভ হবে। কলকাতা থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছতে আগের থেকে দু’ঘণ্টা কম সময় লাগবে। এতে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।

এরপর তিনি বলেন, নদীয়া সেই ভূমি, যেখানে প্রেম, করুণা ও ভক্তির রূপ হিসেবে চৈতন্যদেবের জন্ম হয়েছে। নদীয়ার গ্রামে গ্রামে কীর্তনের সুর উঠতো। ঐক্যের সুর বাজতো। বাংলায় তিনি বলেন, “হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতালে আমার একলা নিতাই”। তিনি বলেন, এই ভাবনা এখনো রয়েছে। এই ভূমিতে চৈতন্যের বাণী এখানে আজও জীবিত রয়েছে। তাঁর কথায়, সমাজ কল্যাণের এই নৌকাকে মতুয়ারা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। হরিচাঁদ ঠাকুর কর্মের মর্ম বুঝিয়েছেন। গুরুচাঁদ ঠাকুর কলম ধরিয়েছেন। বড়মা মাতৃত্ব বর্ষণ করেছেন। এদের সকলকে প্রণাম জানান প্রধানমন্ত্রী।

এরপরেই তিনি বন্দেমাতরম প্রসঙ্গ তোলেন। মোদী বলেন, বাংলা ভাষা ভারতের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। বন্দেমাতরম তার উদাহরণ। বন্দেমাতরমের সার্ধশতবর্ষ উৎসব গোটা দেশে পালিত হচ্ছে। সংসদে বন্দেমাতরম- এর গৌরব গাঁথা আলোচিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাতেই জন্মেছেন মহান সাহিত্যেক ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তখন দেশ পরাধীন। তখন ঋষি বঙ্কিমবাবু বন্দে মাতরম- এর মাধ্যমে স্বাধীনতার মন্ত্র দিয়েছিলেন। নতুন চেতনা তৈরি করেছিলেন। এখন বিকশিত ভারতের প্রেরণা বন্দেমাতরম, আর সেই কারণেই বিজেপি সরকার নতুন নতুন নীতি গ্রহণ করছে।

এরপরেই জিএসটি সংস্কারের মতো পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশবাসী যাতে সঠিক দামে জিনিস কিনতে পারে তা সুনিশ্চিত করেছে বিজেপি সরকার। দুর্গাপূজার সময় রাজ্যবাসী প্রচুর কেনাকাটা করেছেন।

একই সঙ্গে বিহারে বিজেপির জয়ের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “গত মাসে উন্নয়নের কারণেই বিহারে এনডিএ সরকার জনাদেশ পেয়েছে জয়ী হয়েছে। তারপরেই বলেন, গঙ্গাজি বিহার থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছায়। গঙ্গা বাংলাতেও বিজেপির জয়ের রাস্তা তৈরি করেছে। বিহারে জঙ্গলরাজ উপড়ে দিয়েছে, বিজেপি ২০ বছর ধরে কাজ করছে সেখানে। তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গেও মহা জঙ্গলরাজ চলছে। এবার এর থেকে মুক্তি দরকার। এখনকার পশ্চিমবঙ্গ, এখানকার বাচ্চারাও বলছে, সব গ্রাম- শহর- পাড়া বলছে, “বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।”

তিনি আরো জানান, এই রাজ্যের জন্য আরো কাজ করতে চান তিনি। তাঁর কথায়, মোদী আপনাদের জন্য অনেক কিছু করতে চায়। নিজেকে সমর্পিত করে কাজ করতে চায়। টাকা, যোজনা, ইচ্ছা কিছুতেই কমতি নেই। কিন্তু এখানে এমন সরকার যারা সারাক্ষণ কমিশন চায়। এখনো পশ্চিমবঙ্গে বিকাশের হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আটকে রয়েছে।

দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলার মানুষের কাছে মন থেকে বলছি, আপনাদের কথা ভেবে বলছি, তৃণমূল মোদীর বিরোধিতা করতে চাইলে করুক। হাজার বার করুক। বারবার করুক, কিন্তু বুঝতে পারি না রাজ্যের উন্নয়ন কেন আটকানো হচ্ছে? মোদীর বিরোধিতা করুন, কিন্তু বাংলার মানুষকে নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। তাদের স্বপ্ন ভেঙে দেবেন না। এ রাজ্যের মানুষকে দুঃখ দিয়ে পাপ করবেন না।

এরপরই মোদী মানুষের কাছে বিজেপির জন্য সুযোগ চান। তিনি বলেন, বিজেপিকে একটা সুযোগ দিন, ডাবল ইঞ্জিন সরকার গড়তে দিন। দেখুন কত দ্রুত উন্নয়ন হয়। গো ব্যাক অনুপ্রবেশকারী বলা উচিত, কিন্তু গো ব্যাক মোদী বলে ওরা। অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ওরা কিছু বলে না, চুপ করে থাকে। যে অনুপ্রবেশকারীরা বাংলা দখল করবে বলে স্থির করেছে, তাদেরই পছন্দ করে তৃণমূল। এটাই তৃণমূলের আসল চেহারা। আর অনুপ্রবেশকারীদের বাঁচাতে বাংলায় এসআইআর- এর বিরোধিতা করছে তৃণমূল।

এরপরেই ত্রিপুরার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ত্রিপুরাকে দেখুন, সেখানে কমিউনিস্ট বামপন্থীরা ৩০ বছর বরবাদ করেছিল। ত্রিপুরাবাসী আমাদের সুযোগ দিয়েছে, আমরা উন্নয়ন করেছি। বাংলাতেও হয়েছে লাল ঝান্ডাধারিদের থেকে মুক্তি। আশা ছিল ভালো কিছু হবে। কিন্তু তৃণমূল বামপন্থীদের খারাপ গুণ, খারাপ লোকেদের গুণ গ্রহণ করে নিয়েছে, তাই আরো খারাপ হয়েছে।

তাঁর কথায়, বাংলায় এমন সরকার দরকার, যারা দ্রুতগতিতে উন্নয়ন করবে। তিনি আশ্বাস দেন, “যখন ওখানে নিজে যাব আরো কথা বলব। আজ আবহাওয়া খারাপ। আমি সেইসব নেতাদের মত নই, যারা আবহাওয়াতেও রাজনীতির রং লাগিয়ে দেন। আমি বারবার আসবো আপনাদের স্বপ্ন পূরণ করতে। আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে আসবো। আজ বন্দে মাতরম বলে তাহেরপুরে সভার বক্তব্য শেষ করেন নরেন্দ্র মোদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *