হিন্দুদের উপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে! বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে দাবি প্রবাসী হিন্দু কমিউনিটির

আমাদের ভারত, ৭ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু (হিন্দুদের) নির্যাতন নিয়ে প্রবাসী হিন্দু কমিউনিটির উদ্যোগে ৫ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক হয় । বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের সাথে হ ষওয়া এই আলোচনা যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
সংখ্যালঘু হিন্দুদের একাধিক দাবি ও প্রশ্নের উত্তর ওই বৈঠকে মন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে দিতে না পারলেও সেই দাবিগুলি হাসিনা সরকারের আলোচনার টেবিলে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এই আলোচনায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী বলেছেন শেখ হাসিনা সরকারকেই বাংলাদেশে প্রয়োজন, নাহলে আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি সেখানে হয়ে যেতে পারে যা সবার জন্য বিপদ। তিনি আবেদন করেন, আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করে মৌলবাদি শক্তিকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিতে হবে।

বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মেজর জেনারেল বীর উত্তম সি আর দত্তের কন্যা মহুয়া দত্ত বলেন তাঁর বাবা দেশে ইসলাম ধর্ম আনার জন্য যুদ্ধ করেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশে কি এই সংখ্যালঘু নির্যাতন চলতেই থাকবে? মহুয়া দত্ত দাবি তোলেন, অবিলম্বে সংখ্যালঘু হিন্দুদের স্বীকৃতি দিয়ে সংখ্যালঘুদের ১০০% অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

ডঃ দ্বীজেন ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বের জন্য আলাদা নির্বাচন দাবি করেন। একই সঙ্গে সংরক্ষিত আসন থেকে ২০% আসনের তিনি দাবি জানান।

বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎ সরকার বলেন, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে র সংখ্যালঘু ৬৪টি ও সংরক্ষিত ২০% আসনের দাবি মানতে হবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে যাক এটা আমরা এবং মুক্তিযুদ্ধের সরকার কেউ চাই না। ”

প্রবীর রায় বলেন, অবিলম্বে হিন্দুদের উপর থেকে ডিজিটাল আইন বাতিল ও মামলা গুলি প্রত্যাহার করতে হবে একই সঙ্গে সংখ্যালঘু মন্ত্রকেরও দাবি জানান তিনি। এরফলে হিন্দুদের সমস্যা হিন্দুরাই সমাধান করতে সক্ষম হবে।

ওয়াশিংটন থেকে শুভ রায় বলেন, “তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্বক্ষনিক ডঃ দিলীপ নাথের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধান করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

প্রকাশ গুপ্ত বলেন, “যেখানে ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম, সেখানে আমাদেরকে (হিন্দুদের) সংখ্যালঘু স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারের কাছে পাঠানো সংখ্যালঘুদের অন্য দাবিগুলি ২ মাসের মধ্যে বিবেচনা করে একটি সন্তোষজনক উত্তর ও সমাধান চেয়ে আর ও একটি বৈঠকে বসার কথা বলেন প্রকাশ গুপ্তা।

কানাডা থেকে অরুন দত্ত বলেন, “সংখ্যালঘুদের দাবীগুলি সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা এর একটি আশু সমাধান চাই”। রুমা সরকার তার বিরুদ্ধে থাকা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান
রুমা সরকারকে মন্ত্রী আশ্বাস দেন অতি শীঘ্রই জামিন ও তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বাতিল করা হবে।

সুইজারল্যান্ড থেকে অরবিন্দ রায় বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিবরন তুলে ধরেন ও তা সমাধানের দাবি করেন।

বাংলাদেশ থেকে শ্রী অরবিন্দ রায় হিন্দু মেয়েদের নির্যাতন গুম ধর্ষন, ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্মান্তরের ঘটনা প্রতিরোধের দাবী জানান।

বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু শরন্যাক ভান্তে অভিযোগ করেন, তিনি ২ বছর অবরুদ্ধ, তার শিষ্যদের হত্যা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান দাবি করেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত সকলেই সংখ্যালঘুদের স্বীকৃতি, আলাদা আসনে নির্বাচন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবি জানান। মন্দির, মুর্তি, ভাঙ্গচুর প্রতিরোধ করার জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাব তোলেন।

এই বৈঠকে বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০ জন অংশ গ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে ছিলেন মহুয়া দত্ত, ডঃ দিলীপ নাথ, বিদ্যুৎ সরকার, ডঃ দ্বীজেন ভট্টাচার্য, প্রবীর রায়, প্রিয়তোষ দে, শীতাংশু গুহ, সমীর সরকার,জগদীন্দ্র চৌধুরী শিবু, শুভ রায়, ঝলক রায়, সুশীল সিংহ, ভবতোষ মিত্র, প্রানেশ হালদার, অরুন দত্ত, নিত্যানন্দ দাস, নবেন্দু দত্ত, রুপ কুমার ভৌমিক, ডাঃ সমীরণ ভট্টাচার্য, প্রফেসর রুমা সরকার, ক্রিস কৃষ্ণ, প্রফেসর চন্দন সরকার, প্রদীপ চন্দ্র, প্রদীপ মালাকার, নিরঞ্জন সরকার, নির্মলেন্দু রায়, নিরঞ্জন রায়, তুহিন পাল, শরনাঙ্ক মহাথেরো, উপেন্দ্রনাথ রায়, রজত বাবু, অলক চৌধুরী, অমরেন্দ্র রায়, অর্ঘ বাবু, কিরিট সিংহ রায় ও আরো অনেকে।

উল্লেখ্য, ডঃ দিলীপ নাথের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম বাংলাদেশ সরকারের একজন পূর্ণমন্ত্রীর সঙ্গে সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠক হলো। দীলিপ বাবু জানান খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের মন্ত্রীর সঙ্গে সংখ্যালঘু হিন্দুদের সমস্যা সমাধানে আবার বৈঠকের আয়োজন করা হবে। সেখানে তিনি সকলকে অংশগ্রহন করা সহ কার্যকরী ও সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তথা মতবিনিময়ের আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *