আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ১১ অক্টোবর: কাশ্মীরে পোস্টিং শেষ হলেই বিয়ের ভাবনাচিন্তা করা হবে। বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেলেই সন্তর্পণে এমনটাই উত্তর দিতেন কাশ্মীরে শহিদ সেনা জওয়ান সুজয় ঘোষ। কাশ্মীরে কাজ করে হয়তো বেঁচে ফেরার আশা তিনি দেখতে পাননি। তাই বিয়ে করে কোনো মেয়ের শাঁখা সিঁদুর ভাঙ্গতে চাননি। সেই কারণেই সম্ভবত বিয়ের প্রস্তাব বার বার ফিরিয়েছেন বীরভূমের রাজনগর ব্লকের ভবানিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুন্ডিরা গ্রামের সুজয়। দিন চারেক পরেই তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তাকে ফিরতে হল সেনাবাহিনীর কাঁধে চড়ে। দেশের গর্ব শহিদ সুজয়কে শেষ দেখা দেখতে শনিবার বিকেলে গ্রামের মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
প্রান্তিক কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন সুজয় ঘোষ। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল মেজো। বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা। দাদার বিয়ে হয়েছে। ফলে রয়েছে বউদি এবং ভাইজি। বছর সাতেক আগে সেনাবাহিনীতে কাজে যোগদান করেন। বর্তমানে এলিট প্যারা কমান্ডোর পদে ছিলেন। দিন কয়েক আগে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার গাদোলের জঙ্গলে বিশেষ অভিযানে গিয়েছিলেন সুজয়। সঙ্গে ছিলেন আরও এক প্যারা কমান্ডো। কিন্তু প্রবল তুষারঝড়ের কবলে পড়ায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এরপরেই বৃহস্পতি এবং শুক্রবার দু’দিনে দুই এলিট প্যারা কমান্ডোর দেহ উদ্ধার হয় জঙ্গল থেকে।

পরিবারের দাবি, শুক্রবার দুপুরে বাড়িতে সুজয়ের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে। বড় দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষের কাছেই প্রথম ফোন আসে। তাকেই মৃত্যু সংবাদ দেন সেনা আধিকারিকরা। খবর পেয়ে গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। তবুও ছেলের মৃত্যুতে গর্ব বোধ করছেন বাবা রাধাশ্যাম ঘোষ। তিনি বলেন, “ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। এটা দুঃখের পাশাপাশি গর্বেরও। তবে বাড়িতে একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি ছিল সুজয়। তাঁর মৃত্যুতে আমাদের কী যে হবে!”
মা নমিতা ঘোষ বলেন, “লক্ষ্মী পুজোর দিন বড় ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখনই জানিয়েছিল এখনও ছুটি হয়নি। তবে কালীপুজোর সময় বাড়ি আসবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু তাঁর আর বাড়ি ফেরা হল না। এখন সংসারে মাথা তুলে দাঁড়ানোর কেউ নেই। কিভাবে সংসার চলবে ভেবে পাচ্ছি না।”
শহিদ সুজয় ঘোষের মৃতদেহ গ্রামে ঢুকতেই জনতার ভিড় আছড়ে পরে। উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক ওরফে কাজল শেখ, সিউড়ি বিধানসভার বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী, বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। সকলে তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

