আমাদের ভারত, ৫ সেপ্টেম্বর:
রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে জনবিন্যাস পরিবর্তিত হচ্ছে। আর এর প্রভাব সরাসরি হিন্দুদের উপর পড়ছে। আরএসএস মুখপত্র অর্গানাইজারের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির জনবিন্যাস পরিবর্তন সংক্রান্ত একটি ছবি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কিভাবে ওই সব এলাকা থেকে হিন্দুদের প্রভাব কমে গিয়ে মুসলিমরা নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করছে।
ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেদক লিখছেন, তিনি নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, ইসলামপুর, মালদা টাউন, মুর্শিদাবাদ সহ একাধিক জায়গার বিভিন্ন গ্রামে এবং শহরের ঘুরেছেন এই প্রতিবেদন লেখার আগে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সীমান্ত এলাকাগুলি অত্যন্ত উর্বর এলাকা। মাত্র কুড়ি ফুট গভীরে এখানে জল পাওয়া যায়। তিন ফসলি জমি এখানে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই সবুজ। আমের বাগান, চায়ের বাগান, শস্য-শ্যামলা ধরিত্রী এখানে ধরা দেয়। এই এলাকায় বাজার অত্যন্ত জন বহুল। কারণ এখানে কয়েকশো গ্রামের বাসিন্দা এই এলাকার বাজারের উপর নির্ভরশীল। ফলে এখানে ব্যবসার সীমাহীন সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু সমস্যার জায়গা হল, এখানে দুর্বল প্রশাসন আইনকানুন ব্যবস্থা এবং জনবিন্যাসের পরিবর্তন। এই এলাকার শহরগুলি দেশের আর পাঁচটা শহরের মতই। সামঞ্জস্যহীন জনবিন্যাস তৈরি হয়েছে এই এলাকার গ্রামগুলিতে। এখানে বেশিরভাগ গ্রাম ও ছোট শহরগুলিতে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রচুর মুসলিম এখানে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় নানা সমস্যার বেড়াজালে ফেঁসে বহু হিন্দু এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন শহরে বা অন্য কোথাও। অনুপ্রবেশ এখানে বড় সমস্যা। হিন্দুরা যেকোনো রকম সমস্যায় এড়িয়ে যেতে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পরিকল্পিত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে তাদের চলে যেতে বাধ্য করা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ হিংসার পরিবেশ হিন্দুদের মনে ভয় তৈরি করছে। আর তারা সহজেই এলাকা ছাড়ছেন। বলা যায় তাদের পালাতে বাধ্য করা আসলে একটা পরিকল্পনা। কারণ তাদের ঘরবাড়ি জমিজমা ব্যবসা সবটাই দেখভালের নাম করে কোনো মুসলিম দখল করছে। ২-৪ বছর দেখভালের পর ওই দখলীকৃত সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে যাচ্ছে মুসলিমরা। নিজেদের ন্যয্য সম্পত্তি এভাবেই হারাচ্ছে হিন্দুরা।
এই একই পরিস্থিতি ব্যবসায়িক মহলেও। যে ব্যবসায়ী মহলে একসময় হিন্দুদের রমরমা ছিল বা একাধিপত্য ছিল, সেটা এখন মুসলিম ব্যবসায়ীদের দখলে। যেমন মালদা আমের জন্য বিখ্যাত। এক সময় আমের ব্যবসা সম্পূর্ণ কন্ট্রোল করত হিন্দু ব্যবসায়ীরা। এখন সেটা চলে গেছে মুসলিম ব্যবসায়ীদের হাতে।
গ্রামের জল বিন্যাসে নজর দিলে দেখায় বেশির ভাগ গ্রামে প্রায় ৭০ শতাংশ মুসলিম ও ৩০ শতাংশ হিন্দু জনসংখ্যা।
প্রতিবেদক লিখেছেন, তিনি বেশকিছু মুসলিম পরিবারের মহিলা তরুণী ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এক পরিচিত মুসলিমের দামি গাড়ি করেই তিনি একটি গ্রামে যান। আর সেখানে গিয়ে তাদের প্রতিপত্তি দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। প্রতিবেদক লিখছেন সেখানে প্রায় ১২৫ টির ওপরে মাদ্রাসা স্কুল, প্রফেশনাল ইনস্টিটিউশন তৈরি হয়েছে। এমনকি একাধিক হাসপাতাল খোলা হয়েছে। ধর্মীয় স্কুল রয়েছে মুসলিম মেয়েদের জন্যেও। এছাড়াও নার্সিং এবং ফার্মা কলেজ খোলা হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা হলেও বিরাট পরিকাঠামো নিয়ে এই সমস্ত ইনস্টিটিউশনগুলি চালানো হচ্ছে। প্রতিবছর তরুন প্রজন্মের প্রায় ৫০ জন এই সমস্ত মাদ্রাসা থেকে সৌদি আরবের যান ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য। এরা প্রত্যেকেই হয় ইমাম হয়ে ফেরেন। সাত থেকে তিরিশ বছর বয়সের ছেলেরা মাদ্রাসায় শিক্ষা ও নানা কারিগরি প্রশিক্ষণ পায়। এদের জন্য সারা দেশ থেকে টাকা আসে। সৌদি আরব থেকেও এদের জন্যে ফান্ডিং আসে। সরকারের সমস্ত রকম সুবিধা এরা লাভ করে। সরকারের সমস্ত ফান্ড এবং প্রকল্পের সুবিধা তারা খুব সহজেই যাতে পায় তার জন্য প্রতিনিয়ত এরা কাজ চলে। সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য এদের বছরের পর বছর কিংবা মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় না। আবেদনের কয়েকদিনের মধ্যেই তারা সমস্ত সুবিধা পেয়ে থাকেন। এটাও অদ্ভুত যে সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকা পুলিশ প্রশাসনের বেশিরভাগ আধিকারিক মুসলিম।
ওই এলাকার মুসলিম তরুণী ও মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদক জানান, এরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা অর্থাৎ কম্পিউটার নিয়ে কাজ করলেও নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষাকে কখনো অস্বীকার করে না। মেয়েরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে জীবনে এগিয়ে গেলেও তাদের ধর্মের ব্যাপারে তারা গোষ্ঠীবদ্ধ। মেহেজাবি তালিমকে তারা অগ্রাধিকার দেন।
প্রতিবেদক জানান, একটি মুসলিম পরিবার গর্বে সঙ্গেই তাকে জানিয়েছে, তার বাবার তিনটে বৌ ছিল এবং তাদের ৩৯ জন ভাইবোন ছিল। তার নিজের ৬টি ছেলে মেয়ে। বহু শিশুর জন্ম দেওয়ায় মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক এটা তারা মনে করেন না। তাদের কাছে এটি আল্লাহর ফয়জল।
হিন্দুদের জনসংখ্যা ক্রমেই কমে যাওয়া এবং মুসলিমদের জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া গোটা দেশের কাছেই একটি বড় সমস্যা। আর এই সমস্যার অন্যতম উদাহরণ এই সমস্ত এলাকা।
কোন হিন্দু সমাজে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা যদি কেউ অস্বীকার করে তাহলে তাকে পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষ বলাহয়। কিন্তু মুসলিম সমাজের কোনো পুরুষ কিংবা মহিলার এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কোনো খারাপ লাগা নেই। এক মুসলিম মহিলা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গড়ে তাদের প্রায় প্রত্যেক মহিলারই ৬ থেকে ৮ টি সন্তান। তার বক্তব্য ছিল, তারা যদি এই লড়াই না করে তাহলে তারা সংখ্যাতত্ত্বের যুদ্ধে হেরে যাবেন।
আরও একটি বিষয় বিশেষ উল্লেখযোগ্য, তা হল অনেক মুসলিম ছাত্রকেই মাদ্রাসায় কিংবা ফার্মা- নার্সিং পড়াশোনার জন্য খরচ করতে হয় না। যাদের পক্ষে সম্ভব তারা মাসে এক হাজার টাকা দেয়। তাহলে এই বিরাট খরচ আসে কোথা থেকে? প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাধিক মুসলিম দেশ ছাড়া এদেশের কেরালা সহ একাধিক জায়গা থেকে অনুদান আসে।
প্রতিবেদনে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে,
অথচ হিন্দুদের ধর্মের কাজে অনুদান দিতে বললে তারা পকেট থেকে একটি পয়সাও বার করতে চায়না। শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দুরা প্রথমে চায় তাদের ছেলেমেয়েদেরকে খ্রিস্টান মিশনারীদের স্কুলে পড়িয়ে বড় করতে অথচ মুসলিমরা চায় ইসলামিক শিক্ষায় বড় হোক তাদের পরবর্তী প্রজন্ম। হিন্দু ছেলেমেয়েদের যদি কনভেন্ট যাওয়া বয়কট করা যায় তাহলে কিছু হিন্দুর সংস্কার ও মূল্যবোধ বেঁচে যাবে। কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলাই আমাদের একমাত্র উন্নতির মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ।
প্রতিবেদনে স্থানীয় বিজেপির জনপ্রতিনিধিদেরও সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে নির্বাচনে জেতার পর এই সব জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় থাকার বদলে দিল্লিতেই থাকতে বেশী পছন্দ করেন, যা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জনরোষে তৈরি হচ্ছে। এই এলাকার হিন্দুরা বোঝেন যে বিজেপি যদি জেতে তাহলে উন্নয়ন হবে, অর্থ আসবে, শিল্প গঠন হবে। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের তৃণমূল স্তরে কাজের মধ্যে না থাকায় মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। এখানে তৃণমূল স্তরের বিজেপি নেতাদের কাজ করতে দেখা যায় না। বিজেপি যে পশ্চিমবঙ্গে আশার আলো, তা মানুষ বুঝলেও এমন নেতা এখানে নেই যে হিন্দুদের জন্য লড়াই করবে। হিন্দুদের প্রয়োজন একজন তৃণমূল স্তরের নেতা, যে কিনা তাদের জন্য লড়াই করবে এবং সরকারের বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতা প্রকল্পের সুযোগ তাদের এনে দেবে।