Pond polluted, Mejia, মেজিয়ায় কারখানার দূষিত জলে পুকুরে দূষণ, নষ্ট কয়েক লক্ষ টাকার মাছ

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২১ জুন: কারখানার দূষিত জলে পুকুরের সমস্ত মাছ মরে ভেসে ওঠার পর ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে মেজিয়া শিল্পাঞ্চলের ভুলুই গ্রামে। আজ সকালে এই দৃশ্য দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন মাছ চাষিরা। তারা এদিন সকালেই ভেসে ওঠা মরা মাছ নিয়ে ওই কারখানায় গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখে করে কথা বলতে গেলে কেউ তাদের সঙ্গে দেখা করতে বা কথা বলতে চাননি। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন মাছ চাষিরা।

বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের ভুলুই গ্রাম সংলগ্ন ‘রায়-বাঁধ’ নামের ওই পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন স্থানীয় একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। গোষ্ঠীর সদস্য রুদ্র গোপাল চ্যাটার্জি, শেখ নইমুদ্দিন বলেন, আমরা বেকার যুবক। স্বনির্ভর গোষ্ঠী করে ওই পুকুরটি মালিকদের কাছে নিলামে ডাক দিয়ে মাছ চাষ করেছি। ১২ লাখ টাকার মাছ ছাড়া আছে। পাশাপাশি পুকুর মালিকদের নিলামের দর মেটাতে হবে। ৫ বছরের জন্য লিজ নেওয়া ১৫ একর ওই পুকুরটির নিলাম হয় ৫ লাখ টাকায়। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ ধরে প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষকে মানুষ বলেই মনে করেন না। জানি না কোথায় এবং কার টিকি ধরে রেখেছেন তারা। প্রশাসন যদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন তো আমরা ঋণের হাত থেকে বাঁচতে পারব। অন্যথায় আমাদের পথে বসতে হবে।

মাছ চাষি রুদ্রগোপাল চ্যাটার্জি বলেন, ক্ষতিপূরণ না দিলে আমরা কারখানার গেটের সামনে অবস্থানে বসতে বাধ্য হবো।

গ্রামের বাসিন্দা তামান্না বিবি, ফতেমা বিবি বলেন, কারখানা থেকে যে ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে তাতে আমরা থাকতে পারি না। এক এক সময় এত দুর্গন্ধ আসে বমি হয়ে যায়। তাছাড়াও শরীরে নানারকম চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে। ওই কারখানার বর্জ্য জিনিস রাস্তায় পড়ে থাকে। গরু, ছাগলে তা খেয়ে নেয়। ফলে গবাদি পশুও মারা যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রবি রায় বলেন, গত বছর দেড়েক আগে এখানে একটি ইথানল কারখানা উৎপাদন শুরু করে। তখনই আমরা বাধা দিয়েছিলাম। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সবরকম দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এখন তো দেখছি ওরা এলাকার বাতাস, জল, মাটি সব বিষিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, কয়েদিনের টানা বৃষ্টির ফলে কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য পুকুরের জলে এসে পড়েছে। সেই কারণেই এমন বিপত্তি ঘটেছে। যার ফলে রায় বাঁধের কুইন্ট্যাল কুইন্ট্যাল মাছ মরে ভেসে উঠেছে। কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত বর্জ্য জল কারখানার ভেতরে থাকা একটি জলাধারে গিয়ে পড়ার কথা। অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যেই সেই পুকুরে জমে থাকা রাসায়নিক মিশ্রিত জল ছেড়ে দেয়। সেই জল পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি জোড় বা নালার মাধ্যমে দামোদরে গিয়ে পড়ে। সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিতে কারখানার বর্জ্য জল কোনভাবে গ্রামের পুকুরে এসে পড়ে বিষক্রিয়া ঘটে। তাতেই পুকুরের সমস্ত মাছের মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে লিখিত অভিযোগ পেলে সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *