রাজেন রায়, কলকাতা, ১২ সেপ্টেম্বর: একদিকে রাজ্যপাল বার বার রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের রাজনীতিকরণ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন। পুলিশকর্মীরা শাসকদলের দল হিসেবে কাজ করছেন বলে বারবার টুইটে অভিযোগ করছেন। একই দাবি তুলে বিভিন্ন প্রকাশ্য জনসভায় সরব হচ্ছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। সেই প্রসঙ্গেই এবার জবাব দিলেন কলকাতা পুর প্রশাসক তথা পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, পুলিশকে বরাবরই রাজনীতিকরনের থেকে আলাদা রাখা হয়েছে।
শনিবার বেলঘরিয়ায় চা চক্রে বিজেপি রাজ্য সভাপতি যোগ দিয়ে পুলিশকে ফের কটাক্ষ করেন, যতগুলো ওসি, সবচেয়ে বড় চামচা। ওসি আইসি এদের মেরুদণ্ড নেই। এদের বউও হাসে এদের অবস্থা দেখলে। বলে যে, তুমি আমার শাড়িটা পরে যাবে, তুমি ইউনিফর্ম পরবে না।‘
এমনকী এদিন পুলিশকে চাকরি ছেড়ে সবজি বিক্রি করার পরামর্শও দেন দিলীপবাবু। বলেন, অন্তত ছেলে বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে বাবা সবজি বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘আমি দাঁড়িয়ে বলছি চোখে চোখ রেখে। কোনও বাপের ব্যাটা পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলে আমার কথার প্রতিবাদ করুক। আমার দুঃখ হয় পুলিশকে দেখলে, লজ্জা হয়। চাকরি ছেড়ে দিয়ে সবজি বিক্রি করুন। কমপক্ষে আপনার ছেলে বলতে পারবে, আমার বাবা সবজির ব্যবসা করে।‘
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তার পাল্টা বিরোধিতায় সুর চড়ালেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা পুর প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে অন্যান্য জায়গার মত পুলিশকে রাজনীতি করণ করা হয় না। বিভিন্ন প্রদেশে পুলিশের অপ ব্যবহার করা হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে পুলিশ বরাবর নিরপেক্ষ।’
একুশে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে রাজনৈতিক বাকযুদ্ধ। শাসক বিরোধী দলগুলি কেউ কারোর ত্রুটি পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে দোষারোপ করতে। এর মধ্যেই রোজ চরমে উঠছে তৃণমূল ও বিজেপির বাকযুদ্ধ। দিলীপ ঘোষকে পাল্টা কটাক্ষ করে পুরমন্ত্রী বলেন,‘উত্তরপ্রদেশে যেসব পুলিশ বিনা বিচারে বিচারাধীন বন্দিদের এনকাউন্টার করছে, তাদের তাহলে কি পরা উচিত?’ পুরমন্ত্রীর দাবি,‘বাম আমলে সমস্ত অরাজকতা পেরিয়ে এসে, মমতা সরকারের জামানাতেই পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করছে পুলিশ। আসলে দিলীপবাবু যেটা মুখে বলছেন সেটা নিজেও মনে প্রাণে জানেন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কি কাজ করছে।’
এদিন দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেন, পুলিশ রাজ্য সরকারের তাবেদারী করছে। আর যারা ভালো কাজ করছে তাদের কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, ‘আমাদের রাজ্যে কম্পালসারি ওয়েটিং বলে কিছু নেই। পুলিশ কারো তাঁবেদারি করে না। আর কাউকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়েও পাঠানো হয় না। এখানে পুলিশ নিজের মত পূর্ণ স্বাধীনতায় কাজ করে। দাঙ্গাবাজদের রুখতে গেলে তখন পুলিশ নিরপেক্ষ না হলে দাঙ্গা আটকাবে কেমন করে? পুলিশ দাঙ্গা আটকাবে। ক্রাইম আটকাবে। এটাই পুলিশের কাজ। পুলিশ নিজে বিচার করে না তাই কোর্টে নিয়ে যাবে। দিলীপ বাবুদের রাজ্যে এসব হয় না। তাই উপলব্ধি করার ক্ষমতা নেই। সে জন্য যা খুশি তাই বলছেন।’