আমাদের ভারত, ৭ জুলাই: পাকিস্তান ও চিনের বিরুদ্ধে এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল হলো পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিলম ও ঝিলম নদীর ওপরে চিন ও পাক সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ তুলে এই মিছিলে সামিল হন মানুষ। সোমবারের এই বিক্ষোভ মিছিলে বিরাট সংখ্যক মানুষ সংগঠিত হয়েছিলেন বলে খবর পাক সংবাদ মাধ্যমে।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের অভিযোগ এই বাঁধ তৈরির ফলে সেখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তারা “সেভ রিভার সেভ এজেকে” হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে একটি প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, ইসলামাবাদ এবং বেজিং এই ড্যাম তৈরি করে ইউনাইটেড ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নিয়ম ভাঙছে। তাদের আসল উদ্দেশ্য নদী অধিকার করা। সেটাই তারা করছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন এই বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
Pakistan Occupied Kashmir (POK): Residents of Muzaffarabad hold protest against China & Pakistan, opposing the construction of dams on Neelam & Jhelum rivers. A protestor says, "Agreement for the dams was signed between governments of China & Pakistan, we had no say in it." pic.twitter.com/8ys1100Lvn
— ANI (@ANI) July 7, 2020
এছাড়াও ১১২৪ মেগাওয়াটের হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট কহলা নদীর ওপরে ২.৪ বিলিয়ন ডলার খরচা করে তৈরি করছে চিন ও পাক সরকার। পিওকের মানুষ এই প্রোজেক্টরও বিরোধিতায় সরব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা একটু একটু করে চিনকে দান করেছে পাকিস্তান। এই অঞ্চলের এই এলাকা গুলি চিনের হাতে তুলে দেওয়ার অন্যতম কারণ চিন পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের রাস্তাকে মসৃণ করা। ৩২১৮ কিলোমিটার লম্বা এই করিডোর আদতে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ড্রিম প্রজেক্ট। আর সেই প্রজেক্টেরই অন্তর্গত আরো একটি প্রজেক্ট পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিলম ও ঝিলাম নদীর ওপর নির্মীয়মান একটি বাঁধ। কিন্তু চিন ও পাক সরকারের এই কাজ অবৈধ বলে অভিযোগ তুলে বিরোধিতায় সরব হয়েছেন পিওকের মানুষ। সোমবার তার এর প্রতিবাদে বিরাট মিছিল বের করেছিলেন।
করোনার মত মহামারীকে উপেক্ষা করেই চিনের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমেছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা। মুজাফফারাবাদে চিন বিরোধী এই মিছিল একদিন আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের গণসংযোগের আধিকারিকের সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক হয় সেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের স্বাধীনতা দাবি জানানো হয়েছিল। এছাড়াও সেখানে পাক সেনা ও পুলিশ প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছিল।
ক্রমেই পাকিস্তানে চিন বিরোধী সুর চড়ছে। এদিকে লাদাখ প্রসঙ্গে চিনকে অন্ধভাবে সমর্থন করায় বিশ্ব দরবারে পাকিস্তানের গ্রহণ যোগ্যতা আরও কমেছে।
জানা গেছে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক ইতিমধ্যেই ইমরান খানকে বেইজিংয়ের থেকে দূরত্ব তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ গোটা বিশ্ব যখন চিনের উপর বিরক্ত সেই সময় চিনের সঙ্গে যদি না ছাড়ে পাকিস্তান তাহলে আমেরিকা সহ বিশ্বের শক্তিশালী দেশ পাকিস্তানকে একঘরে করে দেবে। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের বিমান ইউরোপের মাটিতে অবতরণের অনুমতি কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
লাদাখে ভারত চিনের মধ্যে চূড়ান্ত উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে চিনকে সাহায্য করতে গিলগিট বালতিস্তানে প্রায় কুড়ি হাজার বাড়তি সেনা পাঠিয়েছে পাকিস্তান। এই বিষয়টিকেও ভালো চোখে দেখেনি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা। করোনা মোকাবিলায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চুড়ান্ত অবহেলা করেছে পাক সরকার বলে অভিযোগ। সেখানে ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কোনো কিছুর সঠিক ভাবে ব্যবস্থা করেনি পাক সরকার। ফলে সবকিছু মিলিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা এবার পাক সরকার ও চিনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামল বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।