পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ সেপ্টেম্বর: এবার কাঁচ দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে পাটের অলংকারে সুসজ্জিত দুর্গা প্রতিমাও।কাঁচ ও পাটের চমক লাগানো সুসজ্জিত, সুনিপুণ কারুকার্য মন্ডিত এই দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে এবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে। থিম নির্ভর এই দুর্গা প্রতিমা বাঁশ, খড় ও কাদামাটির আস্তরণের ওপরে নামমাত্র রং ব্যবহার করে সমস্ত শরীর ও অলংকার কাঁচের গুঁড়ো ও বিভিন্ন রংবাহারি কাঁচের প্লেটে গড়ে তোলা হচ্ছে।
অপরদিকে সামান্য পাটকে অসামান্যভাবে নিপুণ কারুকার্যে ভরিয়ে অলংকার ও বস্ত্রের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে দুর্গা প্রতিমা। চোখ ধাঁধানো মনোরম এই দুর্গা প্রতিমা দুটি তৈরি হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন দু নম্বর ব্লকের সাউরি একারুখি গ্রামে।
এই অভিনব কারুকার্যমণ্ডিত দুর্গা প্রতিমা গুলি গড়ে তুলেছেন মৃৎ শিল্পী পবন দে। তাঁর এই কাজে সহযোগিতা করেছে তাঁর ছেলে পবিত্র দে। যে বর্তমান সাউরি ভোলানাথ বিদ্যামন্দির স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত।পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্পচর্চায় মন থাকায় বাবার কাজে উৎসাহিত হয়ে বাবার সঙ্গে এই মূর্তি গড়ার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ায় সে।

প্রসঙ্গত, মাঝে মাত্র আর কয়েকটা দিন তারপরেই শুরু হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দু্র্গাপুজো।ইতিমধ্যে যার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দেশ, রাজ্য তথা জেলার বিভিন্ন স্থানে। প্রতিমা গড়তে কুমারটুলি গুলিতেও দেখা যাচ্ছে সেই ব্যস্ততার চিত্র।আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা রোদ বৃষ্টির মাঝে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন কারিগরেরা। সময় সংক্ষিপ্ত তাই ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরির প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ের দিকে।আর তেমনই চিত্র আজ দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন দু’ নম্বর ব্লকের সাউরি একারুখি গ্রামে মৃৎ শিল্পী পবন দের কুমারটুলিতে।
শিল্পী পবন দে জানান, এ বছর তিনি তিনটে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন।যেগুলি থিম নির্ভর। সারা বছর বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা গড়েন তিনি। প্রায়ই থিমের ওপরে নির্ভর করে তিনি প্রতিমা গড়েন।সেই মতো এবারেও এই অভিনব থিমের ভাবনা।আর এই থিম নির্ভর দুর্গা প্রতিমা গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ঠিক এক বছর আগে থেকে। অর্থাৎ এক বছর পুজো হয়ে যাবার পর পরের বছর পুজো কেমন হবে সেই থিমের চিন্তা এখন থেকে শুরু করে দেন শিল্পী নিজে। যদিও তিনি জানান, চলতি বছরে থিমের অর্ডার খুবই কম আসছে। কারণ গত দুবছর করোনা পরিস্থিতির পরে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে তার প্রভাব গিয়ে পড়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের ওপর।
এবারের এই কাঁচ নির্ভর দুর্গা প্রতিমা তৈরির পেছনের কারণ হিসাবে তিনি জানান, বর্তমান সমাজ ও সংস্কৃতির অবক্ষয়ের দিকটিকে স্বচ্ছতার মাধ্যমে তুলে ধরতে এই কাঁচের ভাবনা।অর্থাৎ আয়না হচ্ছে প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার বাহক। সেইমতো কাঁচের মাধ্যমে সমাজের স্বচ্ছতার দিক তুলে ধরতে চেয়েছেন শিল্পী পবন দে।
অপরদিকে ক্ষয়িষ্ণু পাটশিল্পকে বর্তমান সরকার যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাটের গুণাগুণ ও কারুকার্য তুলে ধরেছেন তিনি প্রতিমার অলংকার ও বস্ত্রের মাধ্যমে। এই থিম নির্ভর প্রতিমাগুলি যা এক কথায় দৃষ্টিনন্দন, অনবদ্য এবং অসাধারণ বলা চলে। যা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনের সাউরি একারুখি গ্রামে গড়ে উঠছে। যেগুলি আর কিছুদিন বাদেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে শোভা পাবে।

