রাজেন রায়, কলকাতা, ১২ অক্টোবর: ট্রাম শুধু একটা গাড়ি নয়, কলকাতার ঐতিহ্য আবেগ ও ইতিহাসের এক চলমান সাক্ষী। কিন্তু আধুনিক যুগে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে যেন অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে ট্রাম। তাই ট্রামকে শহরের ঐতিহ্যের সাথে মিশিয়ে মাঝেমধ্যে বিভিন্নভাবে আত্মপ্রকাশ করাচ্ছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপাের্ট কর্পোরেশন। ট্রামের ভিতরে বিভিন্ন বইয়ের সম্ভার নিয়ে কিছুদিন আগেই প্রকাশ হয়েছিল ‘ লাইব্রেরি অন হুইলস। এবার হেরিটেজ ট্রামকে সাজানোর এই কাজে হাত লাগিয়েছেন সংশোধনাগারের বন্দিরা। তাঁদেরই তৈরি পাটের হস্ত শিল্প দিয়ে নতুন সাজে সেজে উঠতে চলেছে শহরের ঐতিহ্যবাহী এই পরিবহন মাধ্যম।
হেরিটেজ ট্রামটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘পাটরাণী’। শুক্রবার এই হেরিটেজ ট্রামটির উদ্বোধন হতে চলেছ। দমদম সংশােধনাগারের বন্দিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সোনালী পাটের বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে ট্রামটিকে।
আপাতত নোনা পুকুর ট্রাম ডিপোতে রয়েছে ট্রামটি। ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপাের্ট কর্পোরেশনের উদ্যোগে হলেও পাটের সামগ্রী সরবরাহ করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। জন প্রতি ভাড়া ধার্য করা হয়েছে মাত্র ১৯৯ টাকা। তবে কেউ যদি শ্যামবাজার থেকে এসপ্ল্যানেড হয়ে গড়িয়াহাট পর্যন্ত পুরো সফরের জন্য এই ট্রামটি বুক করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে ২৫০০ টাকা।
সুসজ্জিত এই ট্রামে থাকবে আস্ত একটি ক্যাফেটেরিয়া। পাওয়া যাবে পানীয় জল, জুস ও মুখরোচক সব শুকনো খাবার। শোনানো হবে বাংলা গান।
যাত্রাপথে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলির ধারা বিবরণী দেওয়া হবে। ট্রামের মধ্যে অবশ্যই এসি’র ব্যবস্থা থাকবে। চলবে জেনারেটরে। ট্রাম লাইনে সাধারণত যে বিদ্যুত পরিবাহিত হয় তা ডিসি কারেন্ট। সেইজন্যই এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
ট্রাম তো শুধু ঐতিহ্যশালী পরিবহণ মাধ্যমই নয়, এটি একটি পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণও বটে| তাই ট্রামকে সামনে রেখে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাটের ব্যবহার বাড়ানোর বার্তা দিতে চেয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপাের্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজনবীর সিং কাপুর জানান, “অভিনব এই উদ্যোগে সুষ্ঠু মেলবন্ধন ঘটেছে পরিবেশবান্ধব পাট এবং ঐতিহ্যশালী এবং অবশ্যই পরিবেশবান্ধব পরিবহণ মাধ্যম ট্রামের।”
ট্রামে পাটের যে সামগ্রী মিলবে, সেগুলো তৈরি করছেন প্রেসিডেন্সি এবং দমদম জেলের বন্দিরা। এ বিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রক্ষক ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি মূলত বন্দিদের নিয়েই কাজ করে। সহায়তা করে রাজ্য সরকারের ডিরেক্টরেট অফ কারেকশনাল সার্ভিস। ট্রামটি আধুনিক প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ নিয়ে সতর্ক করবে মানুষকে। বার্তা দেবে, যে প্লাস্টিকের বদলে পাটের জিনিস ব্যবহার করলে দূষণ কমবে অনেকটাই।