চিকিৎসা না পেয়ে ব্যারাকপুরে পথেই রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, খতিয়ে দেখার আশ্বাস পৌর প্রশাসকের

আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ১৪ আগস্ট: ফের বিনা চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটল উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শহরে। ব্যারাকপুরে চিকিৎসা না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে পথেই মৃত্যু হল দীপঙ্কর সিংহ রায় (৩০) নামে এক রোগীর।

বেশ কিছুদিন ধরেই নার্ভের রোগে ভুগছিলেন বছর ৩০-এর দীপঙ্কর সিংহ রায়। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নার্ভের চিকিৎসাও চলছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করে প্রবল শ্বাস কষ্ট শুরু হয় মোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড় চক কাঠালিয়ার বাসিন্দা দীপঙ্কর বাবুর। অবস্থার অবনতি হলে দীপঙ্কর বাবুকে তার আত্মীয়রা প্রথমে বাড়ির সামনে ব্যারাকপুর মাতৃ সদন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। কিন্তু রোগী করোনা সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে, তাই কোনওরকম করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ছাড়াই এই অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দীপঙ্কর বাবুকে ভর্তি নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মৃত দীপঙ্কর বাবুর আত্মীয়রা।

তাদের অভিযোগ, দীপঙ্কর বাবুর কোনও করোনা পরীক্ষা করা হয়নি, কারণ দীপঙ্করের নার্ভের সমস্যা ছাড়া অন্য কিছু সমস্যা ছিল না। এমন কি দীপঙ্কর বাবুকে যে ডাক্তার দেখছিলেন তিনিও মাতৃ সদন হাসপাতালে কর্মীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে দীপঙ্কর বাবুকে ভর্তি নিয়ে চিকিৎসা করবার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মাতৃ সদন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দীপঙ্কর বাবুকে ফিরিয়ে দেয়। এরপর দীপঙ্কর বাবুর অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে ব্যারাকপুরের বিএন বোস মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও বেড নেই বলে রোগীকে একটা ইঞ্জেকশন ও অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। তখন দীপঙ্কর বাবুর আত্মীয়রা বুঝতে পারেন অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ওই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এরপর ব্যারাকপুরে সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন দীপঙ্করের পরিবারের সদস্যরা। তখন রাস্তা লতেই মৃত্যু হয় তার।

এই ঘটনায় দীপঙ্কর বাবুর বাড়ির লোকেরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করেন, “আমাদের রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। আমাদের রোগীর সব রিপোর্ট ঠিক ছিল শুধু করোনা পরীক্ষা করা হয়নি কিন্তু ওনার করোনা ছিল না, বুকে প্রচন্ড কফ জমে যাওয়ার ফলে শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কোনও হাসপাতাল তার চিকিৎসা করেনি। এমন কি, ব্যারাকপুর বি এন বোস মহকুমা হাসপাতালও বেড নেই বলে একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে অন্য সরকারি হাসপাতালে এই রোগীকে রেফার করে দেয়। আর ওই ইঞ্জেকশনের পরেই আমাদের রোগী আরো ঝিমিয়ে পড়ে আর অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই মারা যায়।”

এই ঘটনা শুনে ব্যারাকপুরে পৌরপ্রশাসক উত্তম দাস জানান, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে ওই রোগী নিউরো পেসেন্ট ছিলেন আর ব্যারাকপুর মাতৃসদন হাসপাতালে নিউরো ডাক্তার ছিলেন না, আর ওটি একটি মেটার্নিটি হাসপাতাল তাহলে ওখানে কেনো নিয়ে যাওয়া হল ওই রোগীকে? তবে বেসরকারি হাসপাতাল গুলিও কেন ভর্তি নিল না তা খতিয়ে দেখা হবে। কারণ আমরা সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে দুটি করে বেড সব সময় এই ধরনের রোগীদের জন্য ফাঁকা রাখার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু তা স্বত্বেও এমন ঘটনা কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখছি আমরা। আমি এই ঘটনার খবর আগে জানতাম না, আমাকে জানানো হয়নি। কারোর মৃত্যুই মেনে নেওয়া যায় না। খুবই দুঃখজনক ঘটনা ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *