পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৬ মার্চ: পুরুষের শরীরে মিলল ডিম্বাশয়। ৮৪ বছরের বৃদ্ধকে এমনই রিপোর্ট দিল বালুরঘাটের একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। যা দেখতেই কার্যত চোখ কপালে ওঠার জোগাড় পরিবারের লোকেদের। প্রশ্ন উঠেছে ওই প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের বৈধতা নিয়ে। এদিকে বেআইনী উপায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়েছেন শহরের মানুষ। চিকিৎসার নামে মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবগুলো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কিছুটা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বললেন বৃদ্ধের চিকিৎসক।
জানা যায়, মালদা জেলার বাসিন্দা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী অমিয় চক্রবর্তী। স্ত্রী ইলা চক্রবর্তী বালুরঘাট হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। ৮৪ বছরের অমিয় চক্রবর্তী বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রায় এক বছর ধরে বালুরঘাটের হোমিও চিকিৎসক শান্তনু দাসের শরণাপন্ন হয়েছিলেন মালদার ওই দম্পতি। সমস্যা কিছুটা বাড়তে থাকায় কিডনির ছবি তোলবার পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। আর যার পরেই ওই বৃদ্ধ দম্পতি ছুটে গিয়েছিলেন বালুরঘাটের রঘুনাথপুর এলাকার প্যাথলজিক্যাল ল্যাব ডে কেয়ার সোনোস্ক্যান সেন্টারে। মঙ্গলবার যেখান থেকে রিপোর্ট হাতে পেতেই কার্যত চোখ কপালে ওঠে ওই বৃদ্ধ দম্পতির। বিষয়টি নিয়ে চোখ ছানাবড়া হবার জোগাড় বৃদ্ধর চিকিৎসক শান্তনু দাসেরও। কেননা ওই প্যাথলজিক্যাল ল্যাব তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন ৮৪ বছরের ওই বৃদ্ধর শরীরে ডিম্বাশয় রয়েছে। বুধবার এই ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমতো হইচই পড়ে যায় গোটা বালুরঘাট শহরে। প্রশ্ন ওঠে ওই ল্যাবের বৈধতা নিয়েও। যদিও প্রিন্টিং মিসটেক বলেই দায় এড়াতে চেয়েছেন ওই ল্যাবের কর্ণধার থেকে শুরু করে রেডিওলজিস্ট সকলেই। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার চেহারার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি ও তার চিকিৎসক। তাদের দাবি, এভাবেই মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে বালুরঘাটে জাতীয় সড়কের ধারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবগুলি। ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে ওই প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বৃদ্ধর চিকিৎসক।
উল্লেখ্য, বালুরঘাট থেকে গাজোল যাবার রাস্তায় রঘুনাথপুর এলাকায় ৫১২ জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় প্রতিদিনই গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন প্যাথলজিকাল ল্যাব। সীমান্ত অধ্যুষিত ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে জেলার সদর শহর বালুরঘাটে চিকিৎসা করতে এসে বাসে করে নামতেই রোগীদের যেন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবার প্রতিযোগিতা চলে ওই এলাকায় দালালদের মধ্যে। শহরের রঘুনাথপুর এলাকায় সকাল থেকেই ওইসব প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের অধীনে চলে একশ্রেণির দালালদের রমরমা কারবার। আর তাতেই প্রতিদিন পকেট কাটা পড়ছে সাধারণ মানুষদের। যার আড়ালেই চলছে ভুয়ো রিপোর্ট বানানোর রমরমা কারবার।
বুধবার মালদার বাসিন্দা অমিয় চক্রবর্তীর ওই ভুয়ো রিপোর্ট সামনে আসতেই যেন আরো একবার প্রকাশ্যে এসেছে ল্যাবগুলোর বৈধতার বিষয়টিও। কিভাবে দিনের পর দিন পিডাব্লুডির জায়গায় সঠিক কাগজপত্র ছাড়া ওই ল্যাবগুলির অবৈধ কারবার চলছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন? পরিকাঠামো না থাকলেও কিভাবেই বা অনুমতি মিলছে ল্যাবগুলির? কতগুলি ল্যাবেরই বা সঠিক কাগজপত্র রয়েছে? এই ঘটনা সামনে আসবার পরেই এমন সব প্রশ্ন এখন উকি দিতে শুরু করেছে পুরো দক্ষিণ দিনাজপুরে।
বৃদ্ধ দম্পতি জানান, কিডনির চিকিৎসা করাতে মালদা থেকে বালুরঘাট এসেছেন। তাদের দীর্ঘদিনের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওই ছবি তুলতে গিয়েছিলেন ডে কেয়ার সোনোস্ক্যান নামক সেন্টারে। যেখানকার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার শরীরে ডিম্বাশয় রয়েছে। এ ধরনের অনেক অজানা বিষয় রয়েছে যেগুলো না জেনেই ভুল ওষুধ খেয়ে নিচ্ছেন তারা। আর তাতেই মৃত্যু ঘটছে। এভাবে ভুল রিপোর্ট দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করবার এক্তিয়ার তাদের নেই। বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত।
বৃদ্ধর চিকিৎসক শান্তনু দাস বলেন, চিকিৎসার লাইফে আজ অবধি এই ঘটনা দেখেননি। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্যাথলজিক্যাল ল্যাবেরই সুফল এই ঘটনা।
রেডিওলজিস্ট সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, প্রিন্টিং মিসটেকের কারণেই এই ঘটনা। তারা ওই রিপোর্ট ঠিক করে দিচ্ছেন।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে জানিয়েছেন, ওই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।