সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৮ এপ্রিল: কিছুদিন আগে রাজ্যে মদের হোম ডেলিভারি চালু হওয়ার খবর শুনে রাজ্যে যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন সুরাপ্রেমীরা। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সেই আশা দ্রুত নিভে যায়। এদিকে ফের একটি নতুন ঘটনায় ফের কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে ফের ধন্দে পড়ে গিয়েছেন পানবিলাসীরা। অনেকে আবার নতুন করে আশার আলোও দেখতে শুরু করেছেন।
সূত্রের খবর, ২১ মার্চের পর ১৭ দিনের মাথায় বুধবার ১৫ এপ্রিল থেকে খুলে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পানীয় নিগম বা ‘বেভকো’। অনলাইনে খুচরো বিক্রেতা বা রিটেলারদের কাছ থেকে ইনডেন্ট অর্থাৎ অর্ডার নিতেও শুরু করেছে ওই নিগম।
পশ্চিমবঙ্গে দেশি-বিলিতি সব ধরনের মদের পাইকারি কারবার এখন ওই নিগমের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করে রাজ্য সরকার। মদের দোকানের মালিকদের একাংশ থেকে খদ্দেরদের একাংশও মনে করছেন, বেভকো-র অর্ডার নেওয়া শুরু করার অর্থই হল, অনলাইনের মাধ্যমে হোম ডেলিভারি হোক কিংবা দিনে কিছুক্ষণের জন্য মদের দোকান খুলে মদ বিক্রি। তাই খোলা বাজারে মদ মেলা এ বার শুধু অল্প কিছু সময়ের অপেক্ষা। অথবা ফের চালু হতে পারে মদের হোম ডেলিভারি, কাউকে কিছু না জানিয়েই। বিপুল রাজস্ব ক্ষতি আটকাতে রাজ্যের তরফেই কিছুদিন আগেই চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু বিদ্বজনদের আপত্তি থাকায় তা তুলে নেওয়া হয়। এবার ভেতরে ভেতরে সমস্ত পদ্ধতি চালু করে দেওয়া হচ্ছে। তবে, গতকাল থেকে বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমায় চালু হয়েছে মদের হোম ডেলিভারি। বিক্রি শুরুর আগেই ৩০% অতিরিক্ত কর ধার্য করা হয়েছে। আগে থেকে বুকিং করলে বিকেলের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে মদ।
‘কোভিড-নাইনটিন ম্যানেজমেন্ট’-এর জাতীয় নির্দেশিকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে, মদ বিক্রি কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তার পরেও বেভকো খোলায় মদ্যপায়ীদের অনেকে আশার আলো দেখছেন। এমনকি, নিজের নিজের ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে বেভকো-র ওয়েবসাইটে ঢুকে বহু খুচরো বিক্রেতা দেখেন, আপাতত পাঁচটি ব্র্যান্ডের হুইস্কি ও মাত্র একটি করে ব্র্যান্ডের রাম ও ভদকা পাওয়া যাচ্ছে এবং সেগুলোর নিপ, পাইট ও ৭৫০ মিলিলিটারের বোতল, সব ক’টার দাম ২১ মার্চের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে! এই বাজারে যদি এতটুকুও পানীয় পাওয়া যায় সেটুকু কিনতে গাঁটের কড়ি খরচ করে অসুবিধা নেই তাদের।
কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মদ বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বেভকো খুলে কেন অর্ডার নেওয়া হচ্ছে? আবগারি দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার ২০ এপ্রিলের পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। অামাদের ধারণা, মিষ্টির দোকানেরমত মদের দোকান অন্তত কিছুক্ষণের জন্য রোজ খোলা থাকবে। সেটা আন্দাজ করেই আমরা বেভকো খুলে ইনডেন্ট নেওয়া শুরু করেছি।’ ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘এর আগেও ৮ এপ্রিল আমরা মদের হোম ডেলিভারি চালু করারও চেষ্টা করি। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে রাজি হয়েও পরে পিছিয়ে যায়। এবার মনে হয় সমস্যা হবে না। ‘
কিন্তু এবারে কি আর কোনও আপত্তি করবে না পুলিশ? কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘বেভকো কি করল, সেটা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু মদের দোকান খুলে বিক্রি কিংবা হোম ডেলিভারি, কোনও ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশ নেই। আর নির্দেশ না থাকলে মদের হোম ডেলিভারি বা দোকান খুলে বিক্রি দেখলেই আমরা আইনত ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে নিয়মভঙ্গের জন্য গ্রেফতারও করা হতে পারে।’