আলিপুরদুয়ার, আমাদের ভারত, ১৮ সেপ্টেম্বর:
উত্তরবঙ্গে চা শিল্পে দ্বিপাক্ষিক বোনাস চুক্তি মাত্র দুটি বৈঠকেই সম্পন্ন হল। প্রথম বৈঠকেই দাবি ছিল, ২০শতাংশ বোনাসের। সেই দাবি মেনে নিলেন চা-মালিকরা। গত বছরের তুলনায় আর দেড় শতাংশ বেশি বোনাস দুর্গাপূজার আগে পেতে চলেছেন স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজার চা-শ্রমিক। স্বাভাবিকভাবেই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে কিছিটা হলেও স্বস্তির হাওয়া চা-মহলে।
উল্লেখ্য, চা শিল্পে এবার যে কাম্য বোনাসই পেতে চলেছেন চা শ্রমিকরা তার ইঙ্গিত প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকে পাওয়া গিয়েছিল। নমনীয় মনোভাব নিয়ে বৈঠকে ছিলেন চা-বাগান মালিকদের সর্বোচ্চ সংগঠন সিসিপিএ বা কনসালটেটিভ কমিটি অফ প্ল্যানটেশন অ্যাসোশিয়েশন। চা-শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে আগেই বলা হয়েছিল এবছর ২০ শতাংশের কম বোনাস নেওয়া হবে না। প্রথম বৈঠকে কিছুটা নিমরাজি ছিলেন মালিকরা। যদিও প্রথম বৈঠকেই জানা গিয়েছিল, ১৮ শতাংশের কাছাকাছি বোনাস দিতে প্রস্তুত মালিকরা। প্রথম বৈঠকে ফলাফল বের না হলেও শুক্রবার দ্বিতীয় ভার্চুয়াল বৈঠকে মাত্র ঘন্টাখানেকর মধ্যেই পুজো বোনাস চুক্তি সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, এবার বোনাস বৈঠকে অংশ নিয়েছে সমতলের ১৬৮টি চা-বাগান।সিংহভাগ চা বাগান রয়েছে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং জেলার সমতলে। কোভিড পরিস্তিতিতে এমনিতেই মানুষের হাতে অর্থ কম। এমন একটা পরিবেশে দুর্গাপূজার আগে একটা বড় অর্থ পেতে চলেছেন সব চা-শ্রমিকরা। শুক্রবার বোনাস বৈঠকের ফলাফলের খবর পৌঁছে যেতেই উত্তরবঙ্গে চা-বাগানগুলিতে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। এদিনের বোনাস চুক্তিতে ঠিক হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সবকটি চা বাগানে বোনাস দেবার কাজ শেষ করতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এও জানা গেছে, গতবছর যেখানে সমতলে ৬৮টি চা বাগান রুগ্ন, দুর্বল হিসেবে অনেকটা কম বোনাস দিয়েছিল এবার সেই রুগ্ন, দুর্বল চা-বাগানের সংখ্যা মাত্র ৩৯টিতে নেমে এসেছে। শুধু সংখ্যা কমাই নয়, এও জানা গেছে, যে কয়টি রুগ্ন বাগান রয়েছে তারা গত বছরের তুলনায় এবার দেড় শতাংশ বেশি বোনাস দেবে।
উল্লেখ্য, চায়ের বাজার, দাম, উৎপাদন সব কিছুই ভাল। চা বিশেষজ্ঞরা আগাম জানিয়েছিলেন এবার কাম্য বোনাসই পাবেন চা-শ্রমিকরা। ঠিক তাই হল। বোনাস চুক্তির পর বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ সাফ জানিয়েছেন, গোটা দেশে কোভিড পরিস্থিতিতে শিল্প বেসামাল হলেও চা শিল্প কার্যত ব্যতিক্রমী নজির তৈরি করল। এবারই প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠক। মাত্র দুটি বৈঠকে বোনাস চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে, এমন নজির উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পের ইতিহাসের এক দুই বার হয়েছে।
চা-বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি মোহন শর্মা বলেন,”চা-বাগানের মালিকদের ধন্যবাদ। তারা শ্রমিকদের দাবিকে সবচেয়ে দ্রুত মর্যাদা দিয়েছে। চায়ের বাজার ভাল। স্বাভাবিকভাবেই মালিকদের পিছিয়ে যাবার কথাই ছিল না। সারে ৩ লক্ষ চা শ্রমিকদের জন্যই আজ চা শিল্প মাথা উচু করে চলছে।”
চা-বাগান তৃণমূল কংগ্রেস মজদুর ইউনিয়নের তরফে মোহন শর্মা ছাড়াও মান্নালাল জৈন, সিটু থেকে জিয়াউল আলম, ইনটাক থেকে মনিকুমার দারনাল, ইউটিইউসি থেকে গোপাল প্রধানদের মত পরিচিতরা বোনাস বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২১ তারিখ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গ সফর শুরু করছেন। তার আগেই উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে বোনাস চুক্তি সম্পাদিত হল।