সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৩০ডিসেম্বর: রাজ্যজুড়ে এসআইআর শুনানির আবহে ফের সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সভামঞ্চ থেকে অনেকটা প্রত্যাশা মতই বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভামঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো বিজেপির নাম না করে বলেন যে, শুধু বাংলায় অনুপ্রবেশকারী থাকলে পহেলগাঁও ও দিল্লিতে হামলা তোমরা চালালে? কেন তাড়াহুড়ো করে ২ মাসে এসআইআর করা হচ্ছে?

উল্লেখ্য, বিজেপি প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে যে, এসআইআর-এর ফলে অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের নাম বাদ যাবে। সম্ভবতঃ এই পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বন্দোপাধ্যায় এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। এসআইআর ও বিধানসভা নির্বাচন-২৬ আবহে মঙ্গল বার বড়জোড়ার বীরসিংহপুর ময়দানে জনসভা করেন তিনি। প্রত্যাশা মতোই বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুরুতে গত ১৪ বছরে তাঁর সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। বাঁকুড়া জেলায় শান্তি স্থাপন হয়েছে বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, মাওবাদী আতঙ্কে একসময় বাঁকুড়ায় পর্যটকরা আসতে ভয় পেতেন। এখন সেই ভয় নেই।জেলায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটেছে। তিনি বাঁকুড়ায় এলে জেলার মেধা ও সম্পদের কথা তুলে ধরেন। এবারও তার ব্যতিক্রম
হয়নি।
বাঁকুড়া জেলার পড়ুয়াদের ভাল ফলের কথা উল্লেখ করেন। তৃণমূল সুপ্রিমো ধীরে ধীরে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াতে থাকেন। এসআইআর নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলায় এসেছেন। তাই তার নাম না করে তাঁকে নিশানা করে বলেন, “বাংলাতেই নাকি শুধু অনুপ্রবেশকারী। কাশ্মীরে নাকি নেই। তাই যদি সত্যি হয়, একটা প্রশ্নের উত্তর চাই। পহেলগাঁও কান্ড কি আপনারা করলেন? দিল্লিতে কিছু দিন আগে যে ঘটনা ঘটল, অনুপ্রবেশকারী বাংলা ছাড়া নাকি কোথাও নাই, তাহলে কি আপনারা করলেন?” তিনি আরও সুর চড়িয়ে বলেন,এসআইআর-এ এখনও পর্যন্ত ৫৮ থেকে ৬০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন তিনি। প্রত্যাশা মতই শিল্প এলাকা বড়জোড়ায় তিনি বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার নিয়েও সরব হয়ে বলেন, “উত্তর প্রদেশ, অসম, ওড়িশা, রাজস্থানে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। বাংলায় দেড় কোটি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। আমরা তো অত্যাচার করি না।” আর কয়েক মাস পরেই এরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। এখনও নির্ঘণ্ট ঘোষণা না হলেও বাঁকুড়া জেলায় রাজনৈতিক পারদ ক্রমেই চড়ছে। তৃণমূলের কাছে বাঁকুড়া জেলা এবারের নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্ব হয়ে উঠেছে।
গত একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিই হাতছাড়া হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনেও জেলার ২টি আসনের মধ্যে বিষ্ণুপুর লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছে বিরোধী দল বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমোর বাঁকুড়ার বড়জোড়ার এই জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সভা শেষ করে বিকেলেই কলকাতায় ফিরে যাওয়ার কথা মমতার।
জেলা রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহলের মতে, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সফর। এই সফর ড্যামেজ কন্ট্রোলের লক্ষ্যে বলে মনে করেন অনেকে।বাঁকুড়ায় বিজেপির প্রভাব রয়েছে একথা অস্বীকার করে না তৃণমূল। তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঁকুড়া জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায় শাসক দল।

