রায়গঞ্জের কুমোরটুলিতে শুধুই হতাশা

স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ১৮ জুন: রথযাত্রা প্রায় এসেগেছে, কিন্তু নেই কোনও তোড়জোড় বা স্বতঃস্ফূর্ততা। এই সময় থেকে বিভিন্ন কুমোরটুলিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রতিমা শিল্পীরা। কিন্তু এবারে রায়গঞ্জের কুমোরটুলিতে নেই কোনও ব্যস্ততা। রায়গঞ্জের বিগ বাজেটের পূজো কমিটিগুলো ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে তারা বড় ধরনের পূজো এবার করছেন না। ফলে সারা বছর সংসার চালানোর একমাত্র সুযোগ দুর্গা প্রতিমা নির্মান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে। চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা তাকিয়ে রয়েছেন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে। তাদের আবেদন সরকার তাদের প্রতি একটু নজর দিক।

আর মাত্র সাড়ে তিনমাস বাকি বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার। আর এই সময় থেকেই চরম ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় জেলার কুমোরটুলিগুলোতে। সামনেই রথযাত্রা উৎসব। এই রথযাত্রা উৎসবের দিনেই দুর্গা প্রতিমার কাঠামো পুজো করে শুরু করে দেওয়া হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। কিন্তু করোনা সংক্রমণে দেশজুড়ে চলা তিনমাস লক ডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সমস্ত পুজা অর্চনা। ফলে একেবারে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের কুমোড়পাড়ার প্রতিমা শিল্পীরা।

সারাটা বছর দুর্গাপূজার মরশুমের দিকেই তাকিয়ে থাকেন এই প্রতিমা শিল্পীরা। সারা বছরের সংসার প্রতিপালন হয়ে থাকে দূর্গা প্রতিমা বিক্রির আয় থেকে। রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লীর কুমারটুলিতে ছোট বড়ে মিলিয়ে প্রায় তিনশ জন প্রতিমা শিল্পী রয়েছেন, যারা তাকিয়ে রয়েছেন সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজোর দিকে। এবারে করোনা আবহের জেরে বাড়ির দুর্গাপূজাগুলো হলেও রায়গঞ্জ শহরের বিগ বাজেটের পুজো কমিটিগুলো ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে এবার তারা বড় পূজো করছেন না। ফলে প্রতিমা শিল্পে বড় ধরনের কোপ পড়তে চলেছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে প্র‍তিমা তৈরি করার পর তা যদি বিক্রি না হয় তাহলে তারা সমূহ ক্ষতির মুখে পড়বেন।

সমস্যা রয়েছে বাড়ির পুজোগুলোতেও। যে বাড়িতে পুজোর আয়োজন হচ্ছে সেই বাড়িতেই যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে বন্ধ হয়ে যাবে পুজো। সমস্যায় পড়ে যাবেন প্রতিমা শিল্পীরা। রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লী কুমোরটুলির প্রখ্যাত প্রতিমা শিল্পী ভানু পাল জানালেন, “চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি আমরা। সারাটা বছর এই দুর্গাপূজার জন্যই অপেক্ষা করে থাকি। সংসার প্রতিপালন হয় এই দূর্গাপ্রতিমা বিক্রির আয় থেকেই। বছরের এই সময় থেকেই চরম তৎপরতা শুরু হয়ে যায় কুমোরটুলিতে। কিন্তু এবার নেই কোনও তোড়জোড়, নেই কোনও স্বতঃস্ফূর্ততা।” ভানুবাবু বলেন, শুধু প্রতিমা শিল্পীরাই নয়, এই দুর্গাপুজার উপরে নির্ভর করে থাকেন মন্ডপ নির্মান, আলোক শিল্পী, দেবীর সাজসজ্জা নির্মান শিল্পী থেকে বহু ধরনের শিল্পীরা। দুর্গাপুজো তেমনভাবে না হলে সবাই পথে বসবেন। শিল্পীর আবেদন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার দুর্গাপুজার সাথে যুক্ত সমস্ত শিল্পীদের দিকে নজর দিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *