সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১ এপ্রিল: এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের খবর শুরু হওয়ার পর এযাবৎ কালের সবচেয়ে আতঙ্কিত তথ্য মিলল মঙ্গলবার রাতে। একরাতে আরও নতুন ১০ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যাটা একলাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার রাতেই আরও ২ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫ জনে। এখনো পর্যন্ত একদিনের মধ্যে এত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া রেকর্ড বলেই দাবি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
প্রসঙ্গত সোম থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে রাজ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছিল ৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল একজনের। তবে একইসঙ্গে তিনজন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হওয়ায় কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুরের সেই স্বস্তি মঙ্গলবার রাতেই বেড়ে দাঁড়ায় প্রবল দুশ্চিন্তায়। সন্ধ্যা গড়াতেই যে ভাবে এনআরএস এবং হাওড়ার গোলাবাড়ি থেকে ২ করোনা আক্রান্তের মৃত্যু সংবাদ এসেছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে স্বাস্থ্য ভবনের। বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি করে রিপোর্ট আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে কয়েকজনের, এটাই স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরেই রাত ১০ টা নাগাদ আচমকা পট পরিবর্তন! আরও ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলে। যার মধ্যে সন্ধ্যাতেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ৫৭ বছরের এক ব্যক্তি কাল রাতে হাওড়ার গোলাবাড়ি আইএলএস হাসপাতালে মারা যান। অন্যদিকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ৬২ বছরের আরও এক ব্যক্তি। তবে মৃত্যুর পরে এদের ২ জনের রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে। ফলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন এরা দু’জন।
এনআরএসে যাঁর মৃত্যু হয়েছে তাঁর বাড়ি উল্টোডাঙায়। তাঁর বিদেশ ভ্রমণের কোনও যোগসূত্রে এখনও পাওয়া যায়নি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। সোমবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল রাত ৯টায় নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে এসএসকেএম থেকে। তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। গোলাবাড়ির আইএলএস হাসপাতালে যে প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বাড়ি হাওড়ার মল্লিকফটকে। সোমবার তিনিও প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকাল সন্ধেয় মৃত্যু হয়। নাইসেড থেকে রিপোর্ট আসে তার পরে। ওই প্রৌঢ়ের স্ত্রী, পুত্রবধূ, ভাই এবং ভাইপোকে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভর্তি করা হয়েছে।
একই সঙ্গে খবর আসে, আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালের আক্রান্ত চিকিৎসকের ছেলে, মেয়ে এবং স্ত্রী– তিন জনের শরীরে মিলেছে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এছাড়াও শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে ২ ব্যক্তির শরীরেও মিলেছে করোনা-সংক্রমণ। এগরাতে আরও এক ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ মিলেছে। আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক ব্যক্তির শরীরে মিলেছে সংক্রমণ। দমদম আইএলএস হাসপাতালে ইতালির মিলান ফেরত এক প্রবীণের শরীরে মিলেছে সংক্রমণ। এখনো পর্যন্ত মানুষ সতর্ক না হলে মহামারী আটকানো অসম্ভব হবে, এমনটাই মত স্বাস্থ্যকর্তাদের।