আমাদের ভারত, ২৯ আগস্ট:নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি একের পর এক বাস্তবায়িত করে চলেছে দ্বিতীয় মোদী সরকার। তিন তালাক বিরোধী বিল, ৩৭০ ধারা রদ, রাম মন্দির নির্মাণ, সিএএ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এবার কি তাহলে টার্গেট এক দেশ এক ভোটের পথে হাটা।
জানা গেছে ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সারাদেশের জন্য একটি অভিন্ন ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার বিষয়ে আলোচনা হয়ে গিয়েছে সেখানে। অর্থাৎ যে রাজ্যগুলিতে স্থানীয় স্তরের ভোটে আলাদা ভোটার লিস্ট অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া কার্যকর হয় তা আর হবে না। আমাদের দেশে দুটি সংস্থা ভোট পরিচালনা করে। লোকসভা ও বিধানসভা ভোট পরিচালিত হয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনে তত্ত্বাবধানে আর পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
দেশের বেশিরভাগ রাজ্যে একটি ভোটার তালিকা ব্যবহার করা হলেও ব্যতিক্রম রয়েছে। উত্তর প্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, কেরল নাগাল্যান্ড, অসম অরুনাচল ও কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে স্থানীয় স্তরের নির্বাচনের জন্য পৃথক ভোটার তালিকা তৈরী হয়। আর তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে বহু জায়গায়। দেখা গেছে বিধানসভার তালিকায় কারও নাম রয়েছে অথচ সে পুরসভায় ভোট দিতে পারলেন না। আবার কেউ পঞ্চায়েতে ভোট দিলেও লোকসভার তালিকায় নাম না থাকায় ভোট দিতে পারেনি। এমন উদাহরন প্রচুর। তাই একটি তালিকা তৈরির পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে, এই দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে ১৩ আগস্টের বৈঠকে। এক সংবিধানে ২৪৩কে এবং ২৪৩ জেড (এ) ধারা সংশোধন করে সারাদেশে একটি নির্বাচন করা। দ্বিতীয়টি হল পুরভোট পঞ্চায়েত ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকাকে গ্রহণ করা। এদিনের বৈঠকে নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পিকে মিশ্র।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই এক দেশ এক ভোট নিয়ে সাওয়াল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু ১৯-র নির্বাচনী ইশতেহারে সেকথা খোলাখুলি ঘোষণা করেছিল বিজেপি। তাদের বক্তব্য ছিল বছর বছর ভোট করতে গিয়ে দেশের মানুষের পয়সার শ্রাদ্ধ হয়। এছাড়াও এতবার আদর্শ আচরণবিধির জারি হওয়ায় সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন থমকে থাকে।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে গেলে সরকারকে ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে। কিন্তু তার সাথে এটাও ঠিক যে সরকারের হাতে তিনশ’র বেশি আসন রয়েছে। ফলে তার পক্ষে নীতি কার্যকর করতে আগ্রাসী মনোভাব দেখানোটাই স্বাভাবিক। কারণ ৩৭০ ধারা রদ নিয়ে বিরাট বিতর্কের ঝড় বয়ে গেলেও তাকে বাস্তবায়িত করেছে মোদী সরকার।
তবে এক দেশ এক ভোট প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে গেলে সংসদে সংবিধান সংশোধনের বিল আনতে হবে। দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন নিয়ে পাশ করাতে হবে দুই কক্ষে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে এই কাদ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলই চাইবে না মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবার ভোট হোক। যদি ২০২৪ সাল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় কেন্দ্র, সেক্ষেত্রে একুশে নির্বাচিত বাংলা, কেরালা, অসম সরকারের বয়স সবে মাত্র তিন বছর। তারা কি চাইবেন দু’বছর আগে সরকার পড়ে যাক। তাছাড়াও মাঝপথে যদি কোন রাজ্যে সরকার পড়ে যায় ও অন্য দলের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকে তাহলে কি সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে? ফলে এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।

