স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ২১ অক্টোবর:
বহু বছর আগে বিহারের গয়ার যদুয়াতে আদিপুরুষ স্বর্গীয় পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়ের জমিদারি ছিল। সেই জমিদার বংশেরই আদিপুরুষের বসতবাটি ছিল অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার শান্তিপুরে, যা বতর্মানে তর্কবাগীশ লেনের জজ বাড়ি নামে খ্যাত। বনেদী জমিদার বাড়ির রীতি অনুযায়ী বংশ পরম্পরায় বাড়ির লোকেরাই এই বাড়ির পুজোর পৌরোহিত্য করেন। আজও সেই রেওয়াজ চলে আসছে।
বহু বছর আগের এই পুজো। দেবীপুরাণ মতে এই পুজো হয়ে আসছে। তিন দিন ধরে ভোগ হয়। সপ্তমীর দিন নিরামিষ, অষ্টমীর দিন ইলিশ মাছ, নবমীর দিন কচুশাক সহ সতেরো আঠেরো রকমের ভোগ আর দশমীর দিন পান্তা ভাত সহ সমস্ত রকম বাসি রান্না ভোগ দেওয়া হয়। জমিদার আমলে বড় বড় নৌকায় মায়ের ভোগের সরঞ্জাম আসত। কাটোয়া থেকে মায়ের সাজ আসতো। মায়ের পটের নিচে একটা পঞ্চ মুন্ডির আসন আছে, যা সম্পূর্ণ মাটির তৈরি।
যা আজও মার্বেল বা অন্য কোনওভাবে বাঁধানো সম্ভব হয়নি। বাড়ির সদস্যা রুম্পা (সঞ্চারী) চ্যাটার্জির গলাতে আক্ষেপের সুর ধরা পড়ে। তাঁর কথায় পুজোর গুরুত্বটা কোথাও যেন এবছর হারিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে এবার পুজো হলে ও আড়ম্বরহীন এই পুজো। এবারে পুজোতে বাইরে থেকে আসা কোনও ওদর্শনার্থীর মন্দিরের উপরে উঠা নিষেধ আছে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
যারা অঞ্জলি দেয় তারা এবার সরাসরি পূজা মন্ডপে অঞ্জলি দিতে পারছে না। ঠাকুরের উদ্দেশ্য যারা ফুল দেবে সেটা ঠাকুরের বেদির সামনে কারুর মারফৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। পুজোয় যে রকম প্রতিবছর ভোগ হয় সেরকমই হবে, তবে এবার তুলনায় অনেক কম। এবছর ঠাকুরকে কাটা ফল দেওয়া হচ্ছে না। সে অর্থে যেহেতু প্রসাদ বিতরণ হবে না নিজেদের মধ্যেই প্রসাদ বিতরণ করা হবে। কর্মসূত্রে যাঁরা বিদেশে আছেন তাঁরা হয়ত সবাই আসতে পারছেন না। পূজোয় একসাথে সবাই মিলে যে আনন্দ করার আমেজ সেটা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
আগে জমিদারী আমলে ১৮টা মহিষ ১০৮ টা পাঁঠা বলি হত, সেই বলির রেওয়াজটা এখন অর্থনৈতিক কারণে তাঁরা চালিয়ে উঠতে পারছেন না। তবে মহিষ বলি, পাঁঠা বলি এই পুজোতে বন্ধ হলেও কুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এছাড়া এই বাড়িটি ফানুস বাতিতে সাজানো হত এখন আর সেটা দেখা যায় না।