একই দিনে উত্তর কলকাতার বাগবাজারে এবং মানিকতলায় বিধ্বংসী আগুন, সামলাতে হিমশিম অবস্থা দমকলের

রাজেন রায়, কলকাতা, ১৩ জানুয়ারি: একই দিনে উত্তর কলকাতার দুই প্রান্তে বিধ্বংসী আগুন সামলাতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা দমকলের। একদিকে বুধবার দুপুরে আচমকাই ভয়াবহ আগুন লাগল মানিকতলা সাহিত্য পরিষদ রোডে ব্যাটারি কারখানায়। দমকলের ১১টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণে আসে। অন্যদিকে বুধবার সন্ধ্যেতেই বাগবাজারে ব্রিজের কাছে বস্তিতে ভয়াবহ আগুন লাগে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দমকলের ২৫ ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। রীতিমত হাহাকার পড়ে গিয়েছে গোটা বস্তিতে। ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি সামাল দিতে উপস্থিত শ্যামপুকুর থানার পুলিশ।

বুধবার দুপুরে মানিকতলার ব্যাটারি কারখানার তিনতলা ওই বিল্ডিংয়ের দোতলা থেকে অনর্গল ধোঁয়া বের হতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দমকলের ১১টি ইঞ্জিন। নীচের ঘর থেকে আগুন বেরনো শুরু হলেও দ্রুত তা গোটা তিনতলা বাড়িটিকে গ্রাস করে নেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করে দমকল।
কিন্তু অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয় দমকল কর্মীদের। এলাকার বাসিন্দাদের সেখান থেকে সরিয়ে এনে চলে আগুন নেভানোর কাজ। তবে গোটা এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলা দলও হাজির হয়। শেষ পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় দমকল। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, প্রথমে ভোজ্য তেলের গুদামে আগুন লাগে। তারপরই সেখান থেকে ব্যাটারির কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন। কারখানায় অনেক সামগ্রী মজুত ছিল। তাই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এদিকে এই আগুন নিয়ন্ত্রণ হতে না হতেই সন্ধ্যেয় বাগবাজার ব্রিজের কাছেই বাগবাজার উইমেন্স কলেজ সংলগ্ন বস্তিতে বিধ্বংসী আগুনের খবর পাওয়া যায়। শুধু আগুন লাগাই নয়, বস্তি এলাকায় পরপর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং উত্তরে হাওয়ার জেরে আগুন আরও ভয়াবহ আকার নেয় বলে জানিয়েছে দমকল। সন্ধ্যে পৌনে সাতটা নাগাদ প্রথম ফোন পায় দমকল কর্মীরা। এদিকে আগুনের জেরে আপাতত লক গেটগামী রাস্তার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গঙ্গার কাছাকাছি থাকায় উত্তুরে হাওয়ার জেরে উইমেনস কলেজের পার্শ্ববর্তী এলাকাতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী বহুতলেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে উইমেনস কলেজেও আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। আগুন লেগেছে মায়ের বাড়ির অফিসেও। সেখান থেকে মহারাজদের বের করে আনা হয়েছে। পাশাপাশি বইপত্রও সরানো হয়েছে।

এদিকে এই এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন দমকলের গাড়ি দেরি করে আসা নিয়ে। বস্তির জনঘনত্ব বেশি হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছে দমকল। এদিকে পুলিশের উপরও ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বাসিন্দারা। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙ্গচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গঙ্গাসাগর থেকে রওনা দিয়েছেন কলকাতা পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।

এলাকার পাশেই একটি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। আগুন সেখানে পৌছানোর আগেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে দমকল। আর টালা ব্রিজ বন্ধ থাকায় উত্তর কলকাতা গামী গাড়িগুলি লকগেট হয়ে যেত। তবে এখন সেই রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে। লকগেট এবং আশপাশের রাস্তা সহ গিরিশ পার্ক থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ গাড়ি যাতায়াত করানো হচ্ছে বেলগাছিয়া ব্রিজের দিক দিয়ে। ফলে উত্তর এবং মধ্য কলকাতায় রীতিমতো যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বাগবাজার খাল থেকে জল নিয়ে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দমকলকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *