Bankura, Garu Khuta, ভাইফোঁটার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া সহ রাঢ়বঙ্গ মেতে ওঠে “গরু খুটা” পরবে

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৪ অক্টোবর: বাঁকুড়া জেলার গ্রামাঞ্চল ভাইফোঁটার দিন সন্ধে থেকে মেতে ওঠে ‘গরু খুটা’ উৎসবে। পশুর শুকানো চামড়া শুকিয়ে নাগারা বাজিয়ে ও সকলে ঘিরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে গরুকে উত্তেজিত করা হয়। সেই উত্তেজিত গরুর সঙ্গে আনন্দ করা হয়।

রাঢ় বঙ্গ তথা বাঁকুড়ার এক অন্যতম লোক উৎসব হল ‘গরু খুটা’ বা সহরায়। এ এক অত্যন্ত প্রাচীন উৎসব। এই দিন গরুকে পরম যত্ন করে পূজা করার পাশাপাশি নানান খাবার সাজিয়ে তাকে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরুকে খু্ঁটিতে বেঁধে নাগারা, ঢোল বাজিয়ে উত্তেজিত করে আনন্দ উপভোগ করা হয়। কোথাও পশুর শুকনো চামড়া তার মুখের সামনে তুলে ধরা হয়, এতে গরু উত্তেজিত হয়। জেলার পশু প্রেমী সংস্থা এনিয়ে আন্তরিক হওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

এদিন বাঁকুড়া শহর লাগোয়া নবজীবনপুর এলাকায় গরুখুঁটা উৎসবে মাততে দেখা যায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের। এই উৎসবের অঙ্গ হিসেবে একটি সবল গরু বেছে নিয়ে তাকে ভাল করে স্নান করিয়ে গায়ে ও শিং-এ সরিষার তেল মাখিয়ে সারা গায়ে নানা রঙের ছাপ দিয়ে সাজিয়ে তুলে সেই গরুটিকে পূজো করা হয়। তারপর গ্রামের এক প্রান্তে নিয়ে গিয়ে শক্ত খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। প্রাচীন এই প্রথা মেনে আনন্দে মেতে ওঠেন গ্রামের আদিবাসীরা। অহিরা গান গেয়ে ন্যাগড়া সহ আদিবাসী বাজনা বাজিয়ে এবং লোম যুক্ত পশুর শুকনো চামড়া দুলিয়ে গরুটিকে উত্তেজিত করে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষমতা দেখানোর খেলা চলে।

বাঁকুড়া জেলা পশু ক্লেশ নিবারণী সমিতির সদস্য সংস্থা মাই ডিয়ার ট্রিজ এন্ড ওয়াইল্ডসের পক্ষ থেকে এই গোরু খুঁটা উৎসব একটা অত্যাচার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, গরু খুঁটা বা সহরাই হলো ফসল কাটার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা সহ পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসী মানুষ নিষ্ঠ ও পরম্পরা মেনে করে থাকেন। এই উৎসবটি ‘গরুর উৎসব’ নামেও পরিচিত। এই উৎসবের উদ্দেশ্য হলো ফসলের বৃদ্ধি এবং পশুপাখির সমৃদ্ধির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা। তবে গরুকে ঘিরে জোরে বাজনা বাড়িয়ে, চিৎকার করা হয়। এতে গরুটি ভয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এটা পশু ক্লেশ নিবারনী আইনের পরিপন্থী। তাই গরুর প্রতি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

অনন্ত মাহাতো, সুবীর মাহাতো জানান যে, ভাইফোঁটা থাকায় শুক্রবার জেলার অধিকাংশ জায়গায় এই উৎসব পালিত হচ্ছে। তাদের বক্তব্য, বাড়িতে গরু থাকা মানে সেই পরিবার ধনী বলে ধরে নেওয়া হতো। গরুকে সমৃদ্ধির প্রতিক বলে মেনে আসা হচ্ছে। তাই গরুর সঙ্গে আনন্দে মেতে উঠতেই এই গরুখুঁটা লোকাচার পালন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *