স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ১৪ নভেম্বর:
দীপাবলীর আগের দিন অন্ধকার নেমে এল তেহট্ট থানার রঘুনাথপুর গ্রামে। এইই গ্রামের ছেলে সুবোধ ঘোষ (২৪) কাশ্মীরে পাক হামলায় গুলিতে শহীদ হয়েছেন। সেই খবর শুক্রবার বিকালে বাড়িতে আসতেই অন্ধকার নেমে আসে গ্রামে।
গত জুলাই মাসে ৪০ দিনের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। তাঁর পোস্টিং ছিল কাশ্মীরে। শুক্রবার রাতে তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে কাশ্মীর থেকে জানানো হয় যে সুবোধ পাকিস্তানের জঙ্গিদের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। এই খবর শোনার পর বাড়িতে প্রতিবেশীরা ভিড় করেন।
গৌরাঙ্গ ঘোষ ও বাসন্তী ঘোষের একমাত্র ছেলে সুবোধ। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়েছেন তাঁরা। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে আর্মির চাকরিতে যোগদান করেন। ট্রেনিং শেষে তাঁর পোস্টিং হয় পঞ্জাবে। সেখান থেকে তাঁর পোস্টিং হয় কাশ্মীরে। গত নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখে তাঁর বিয়ে হয় অনিন্দিতা ঘোষের সাথে। তাঁদের তিনমাসের কন্যা সন্তান রয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আবার এসে মেয়ের অন্নপ্রাশন দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। আজ তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে মা বাবা বাকরুদ্ধ। মা শুধু কেঁদেই চলেছে। বাবা পাথর হয়ে গিয়েছেন। মা বাসন্তী ঘোষ বলেন, সুবোধ বৃহস্পতিবার রাত নটা নাগাদ ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছিল। আমরা চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম সেইখানে কি হল তাও জানতে চাইলো। আমাদের শরীরের যত্ন নিতে বলেছিল। শুক্রবার সকাল থেকে ফোন করলে রিং হয়ে গেলেও কেউ তোলেনি। পরে সুইচ অফ হয়ে যায়। পরে চারটে নাগাদ কাশ্মীর থেকে মেজর ফোন করে বৌমাকে এই সংবাদ দেয়। আমি ওই ফোন কেড়ে নিয়ে শুনি এই দুঃসংবাদ। আগে আমাদের টালির ঘর ছিল। ও চাকরি পাওয়ার পর দোতলা বাড়ি, সেটা এখানো সম্পূর্ণ হয়নি। তাঁর আগেই সব শেষ। প্রতিবার ছুটির সময় বাসস্টপ থেকে ওর বাবা বাড়ি নিয়ে আসত।
সুবোধের স্ত্রী অনিন্দিতা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ফোনে আমার সাথে অনেক কথা বলে। মেয়েকে সোয়েটার কিনে দিতে হবে। মেয়ের ঠাণ্ডা না লাগে। শরীর খারাপ হলে সব সময় মেয়েকে চিকিৎসক দেখিয়ে নিও। প্রতিদিন ডিউটির শেষে আমাদের ফোন করতো। শুক্রবার সকাল থেকে ফোন করলেও ধরেনি। পরে বিকালে একজন ফোন করে বলে আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ও ছুটিতে বাড়ি এলেই আমাদের সাথেই থাকতো। ও খুব মিশুকে ছিল। সবার খোঁজ নিত।