সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৩ জানুয়ারি: নেতাজির স্মৃতিতে অনেক অনেক কিছুই করেন। কিন্তু উত্তর কলকাতার এই তেলেভাজার দোকান এক অদ্ভুত ভাবে পালন করে এই মহাপুরুষের জন্মদিন। বিধান সরণীর ওপরে হাতিবাগানের কাছে লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ অ্যান্ড সন্স-র তেলেভাজার দোকান। আলু, ফুলকপির চপ, বেগুনি, ফুলুরি থেকে পেঁয়াজি, সবই পাওয়া যায়।
১৯১৮ সালে চালু হওয়া এই দোকান ১০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে । কিন্তু এই দোকানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে মনে রেখে তাঁর জন্মদিন ২৩ জানুয়ারিতে বিনা পয়সায় পছন্দমত চপ খাওয়ানো হয়। এবারও তার কোনও ব্যাতিক্রম হয় নি। বৃহস্পতিবারও সারাদিন ধরে গরম গরম তেলেভাজা দেওয়া হয়েছে সকলকে বিনা পয়সায়। ছোটদের জন্য বরাদ্দ ছিল দুটি করে চপ। আর পরিবারের জন্য চারটে। আগে সকলকে যেমন খুশি যতখুশি চপ দেওয়া হত। কিন্তু লোকসংখ্যা বেড়ে যেতে মাথাপিছু হয়েছে এই নতুন নিয়ম।
কত মানুষকে বিনা পয়সায় তেলেভাজা খাওয়ানো হয়েছে? দোকানের বর্তমান মালিক মোহন সাউ বলেন, হিসেব নেই খাতায় কলমে, তবে ১০ হাজার মানুষ তো হবেই। লোকে সকালবেলা ও বিকেলবেলা রীতিমত লাইন দিয়ে চপ কেনে আজকের দিনে।
জানা গেছে, নেতাজির জন্মদিনে বিনা পয়সায় তেলেভাজা খাওয়ানো তাদের দীর্ঘ ট্রাডিশন। ১৯৪৭ সাল থেকেই এই রীতি শুরু হয়েছে যা আজও চলছে। দাদু থেকে নাতি, তিন পুরুষই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে বিনে পয়সায় তেলেভাজা খাইয়ে আসছে। অবশ্য নেতাজির সঙ্গে এই দোকানের যোগাযোগের একটা ইতিহাস রযেছে। ছাত্রাবস্থায় নেতাজি এই দোকানের তেলেভাজা খেতেন। একবার কঙগ্রেসের এক মিটিংয়ে তেলেভাজা সরবরাহ করেছিল এই দোকান। আর তার পর এক সময়ে বিপ্লেরীদের যোগাযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল এই তেলেভাজার দোকান। বিপ্লবীদের মধ্যে তথ্য দেওয়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও লিঙ্ক ম্যানের ভূমিকা পালন করেছিলেন এই দোকানের তৎ্কালীন মালিক খেদু সাউ। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উদ্দেশ্যে নেতাজির পাঠানো গোপন চিঠিপত্রও চালান হত এই দোকান থেকেই। আজও নেতাজিকে মনে রেখে ট্রাডিশনকে বাঁচিয়ে রেখেছে সাউ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মও। তাঁদের দাবি, এভাবেই দেশের ও দেশনায়কের প্রতি তাঁরা শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করেন।