করোনাসুর বধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি, শুক্রবার ফের গোটা রাজ্য জুড়ে ‘ড্রাই রান’

রাজেন রায়, কলকাতা, ৭ জানুয়ারি: এবার আর তিন জায়গায় নয়, গোটা রাজ্যজুড়ে প্রত্যেক জেলায় হবে করোনার টিকাকরণ-প্রক্রিয়ার মহড়া। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার রাজ্যজুড়ে হবে ‘ড্রাই রান।’ রবিবার কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ডিজিসিআই। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব ঘোষণা করেন, ১০ দিনের মধ্যে দেশজুড়ে জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি রয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, গোটা
রাজ্যজুড়ে এই ড্রাই রান চলবে ৮ জানুয়ারি, শুক্রবার। এর জন্য প্রতিটি জেলায় তিনটি কেন্দ্রকে বাছাই করা হচ্ছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে ২৫ জনকে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২ জানুয়ারি রাজ্যে ৩ কেন্দ্রে ‘ড্রাই রান’ হয়েছিল। সেবার বিধাননগর পুরসভার অন্তর্গত দত্তাবাদ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মধ্যমগ্রাম পুরসভার অন্তর্গত আর্বান প্রাইমারি হেলথ সেন্টার ফোরে, এবং আমডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে হয়েছিল টিকাকরণ প্রক্রিয়ার মহড়া। তারপর ফের টিকাকরণের মহড়া শুরু হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। শুক্রবারের মধ্যে সেরাম ইন্সটিটিউটের তৈরি ভ্যাকসিনও পৌঁছে যাওয়ার কথা কলকাতা বিমানবন্দরে। ২ জানুয়ারি যে পদ্ধতিতে রাজ্যে ড্রাই রান করা হয় এবারও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। সে বার লন্ডন থেকে দুবাই হয়ে কার্গো বিমানে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছয় ভ্যাকসিন। এবারও একইভাবে ভ্যাকসিন আসবে বলে জানা গিয়েছে। তারপর সেগুলি রেফ্রিজেটেড ভ্যাকসিন ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে সরকারি মেডিক্যাল স্টোরে আর সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে টিকাকরণ কেন্দ্রগুলিতে। টিকাকরণ শুরু হলে যাতে কাউকে সমস্যায় না পড়তে হয় এবং কোনও তথ্যগত বা প্রক্রিয়াগত ভুলত্রুটি না হয়, তার জন্য ফের ড্রাই রান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

উল্লেখ্য, এই ড্রাই রানের সমস্ত তথ্য সংরক্ষিত করা হবে কো-উইন নামে একটি অ্যাপে। স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম, তাঁদের পরিচয় ইত্যাদি তথ্য ওই অ্যাপের মধ্যে সঞ্চিত থাকবে। টিকা নেওয়ার পরই যিনি তা নিচ্ছেন তাঁর কাছে এসএমএস যাবে। টিকার পরবর্তী ডোজ কবে নিতে হবে, তাও ওই সফটওয়্যার জানিয়ে দেবে। একইসঙ্গে প্রতিষেধক এলে এবং তা দেওয়ার সময় কী কী করতে হবে, কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে, তা বুঝিয়ে দেওয়া হবে এই ড্রাই রানে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জেলায় জেলায় ও প্রত্যন্ত গ্রামেও ড্রাই রান চালানো হবে। এই ড্রাই রানে মূলত দেখা হবে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকাঠামো কতটা তৈরি। টিকা মজুতের স্টোরেজ পরীক্ষা, সেখান থেকে টিকাকরণ কেন্দ্রে টিকা নিয়ে যাওয়া, টিকাকরণ কেন্দ্রে চিকিৎসাকর্মী ও টিকাগ্রহীতাদের নিয়ে যাওয়া, করোনা সুরক্ষাবিধি পালন, অ্যাপে টিকাকরণের তথ্য আপলোড ইত্যাদি নানা কিছুর ট্রায়াল রানই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। ড্রাই রানের সমস্ত তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। জানা গিয়েছে, যেখানে এই ড্রাই রান প্রক্রিয়া চলবে, সেখানে যারা এই টিকা গ্রহণ করবেন তাঁদের ঢোকা, বেরোনোর জন্য আলাদা জায়গা থাকবে। এছাড়াও ইন্টারনেট পরিষেবা দ্রুতগতির থাকতে হবে, টিকার সচেতনতামূলক সমস্ত রকম বিজ্ঞাপন সঠিকভাবে ডিসপ্লে করতে হবে। প্রত্যেকটি টিকা গ্রহণকারীর নাম, ঠিকানা-সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি বিস্তারিত ভাবে কেন্দ্রীয় ‘কো উইন’ অ্যাপ্লিকেশনে নথিভুক্ত করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বলা হয়েছে। তবেই আসল টিকাকরণের সময় প্রকৃত যুদ্ধজয় সম্ভব বলে দাবি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *