সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৯ এপ্রিল: লকডাউনের মধ্যে প্রতিবন্ধী ছেলের উদ্ধত আচরণ মেনে নিতে পারলেন না বাবা। বাড়ির বাইরে বেরোনোর সময় বাবা বারবার বলা সত্ত্বেও ছেলে কোনও কথাই শোনেননি। সেই কারণেই ছেলেকে খুন করে থানায় আত্মসমর্পণ করল বৃদ্ধ বাবা। শনিবার সন্ধ্যায় শ্যামপুকুর থানায় ওই বৃদ্ধ বাবার বক্তব্য শুনে আঁতকে ওঠেন খোদ থানায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররাই।
শনিবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ শ্যামপুকুর থানায় হাজির হন ৭৮ বছরের বৃদ্ধ বংশীধর মল্লিক। থানায় ঢুকে ডিউটি অফিসারকে তিনি জানান, বাড়িতে ছেলে শীর্ষেন্দু মল্লিককে (৪৫) তিনি খুন করে এসেছেন। ১–ই শোভাবাজার রোডে তাঁর বাড়িতে ছেলের মৃতদেহ পড়ে আছে। তিনি
আত্মসমর্পণ করতে চান।
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সঙ্গে সঙ্গে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে পৌঁছে যান তদন্তকারী অফিসাররা। বৃদ্ধের ঘর থেকেই তার ছেলে শীর্ষেন্দু মল্লিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপরই ছেলেকে খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হয় বংশীধরবাবুকে।
শোভাবাজার রোডের বাড়িতে স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে থাকতেন বংশীধর। তার পুত্র জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। পাশাপাশি মৃগী রোগও রয়েছে তাঁর। অন্যদিকে বংশীধরের স্ত্রীও গত ১৮ বছর ধরে পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। একার পেনশনের টাকায় দুই প্রতিবন্ধীকে নিয়ে সংসার চালাতেন বংশীধরবাবু। সেই টাকাতেই একদিকে স্ত্রীর ওষুধের খরচ, অন্যদিকে ছেলের সবরকম খরচ চালাতে হত। একদিকে পরিবারের দুজনের অসুস্থতা, অন্যদিকে আর্থিক অনটন নিয়ে এমনিতেই উদ্বেগে ছিলেন ওই বৃদ্ধ। তার ওপরে ছেলের উদ্ধত আচরণ তিনি মানতে পারেননি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত শয্যাশায়ী মায়ের সামনেই ছেলেকে বংশীধরবাবু খুন করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ছেলের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে খুন করেছেন বলে দাবি করেন বৃদ্ধ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছে শীর্ষেন্দুকে। পুলিশ জানিয়েছে ছেলে মাস্ক না পরায় তিনি খুন করেছেন, এমনটাই জানিয়েছেন বংশীধরবাবু। তবে সেটি একমাত্র বিষয় কিনা, তা তদন্তকারীদের কাছে পরিষ্কার নয়। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা বলেন, “কি কারণে খুন হয়েছে সেটি এখনও তদন্ত সাপেক্ষ। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুনের আসল কারণ জানার চেষ্টা চলছে।”