পুনর্বাসনের দাবিতে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ঐক্য পরিষদের

আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ১৫ জুন: গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন ও তেলুগু কলোনীর বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের দাবিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সাথে দেখা করলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কিছু কর্মকর্তা। ওখানে বহুতল আবাসিক ভবন তৈরি করে উচ্ছেদকৃত সকল পরিবারকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী।

রাজধানীর কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঢাকার গোপীবাগ (টিটিপাড়া) হরিজন ও তেলেগু কলোনীর উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন এবং নতুন করে পুনর্বাসন ছাড়া কোনও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার দাবি জানান রাণা দাশগুপ্ত ও ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

পরিষদের এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে লেখা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে তিনি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। 

রেলমন্ত্রী এ সময় বলেন, পুনর্বাসন ছাড়া আর একটি পরিবারকেও সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। ওই কলোনী থেকে ইতিপূর্বে উচ্ছেদকৃত সকল পরিবারকেও যথাযথ পুনর্বাসন করা হবে। তিনি জানান, গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন ও তেলেগু কলোনীর বাসিন্দাদের জন্য সেখানে অতি দ্রুত বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে। 

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ সময় ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দকে জানান, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আন্তরিক। তিনি নিজেও সম্প্রতি ওই কলোনী পরিদর্শন করে কলোনীর বাসিন্দাদের সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে দেখে এসেছেন। 

সাক্ষাৎকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তরফে রেলমন্ত্রীকে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে ওই কলোনীর ১১২টি পরিবারকে প্রথম দফায় উচ্ছেদ করা হয়। সেই সময় প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে পুনর্বাসনের লক্ষে উচ্ছেদকৃত ১১২ পরিবারের তালিকা তৈরী করা হলেও আজ অবধি তাদের কোনও ধরণের পুনর্বাসন করা হয়নি।

পরবর্তীতে আরও ২৭টি পরিবারকে তালিকা প্রণয়ন ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়। এখনও হরিজন ও তেলুগু সম্প্রদায় মিলে যারা ওই কলোনীর বাসিন্দা আছেন তাদেরকে কয়েকদিন পরপর প্রকল্পের কর্মকর্তারা গিয়ে যে কোনও সময় উচ্ছেদ করা হবে মর্মে মৌখিকভাবে জানিয়ে আসছেন। এমতাবস্থায় কলোনীর বাকি পরিবারগুলো সার্বক্ষণিক উচ্ছেদ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। 

আগের দুই দফায় উচ্ছেদকৃত ১৩৯টি পরিবারের সদস্যরা কলোনীর বাকি পরিবারগুলোর সাথে তাদের ঘরে গাদাগাদি করে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন। কোনও ধরণের পুনর্বাসন ছাড়াই এই উচ্ছেদ অত্যন্ত মানবেতর এবং নিশ্চয়ই তা মানবাধিকার পরিপন্থী।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রায় দুইশ’ বছর পূর্বে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে হরিজন ও তেলুগু সম্পদ্রায়ের মানুষকে এখানে পরিচ্ছন্নতার ও রেলওয়ের অন্য নানা কাজের প্রয়োজনে আনা হয়। উপরোক্ত কলোনীর বাসিন্দারা পূর্বে ফুলবাড়ীয়া পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় কলোনী করে বসবাস করতো।

৪০-৪৫ বছর আগে ফুলবাড়ীয়া এলাকার উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনে তাদের সেখান থেকে বর্তমান গোপীবাগ (টিটিপাড়া) কলোনীতে আনা হয়। এদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত থাকলেও বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশকেই রেলওয়েসহ সরকারি কোনও প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তারা নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করে অতি সামান্য উপার্জনে কোনও রকমে দিনাতিপাত করছেন।

প্রায় দু’শ বছরে তাদের কোনও স্থায়ী জমি বা বসতভিটা নেই। তারা বংশপরম্পরায় এ দেশের নাগরিক হলেও কলোনীর গাদাগাদি করা মানবেতর জীবনের বাইরে অন্য কোন নাগরিক সুবিধা পায় না। সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষের সাথে তাদের স্বাভাবিক মেলামেশার সুযোগও নেই।

তাদের অন্য কোথাও বাসাভাড়া কেউ দেয় না। এমতাবস্থায় অন্য কোনো জায়গায় তাদের বিকল্প পুনর্বাসন না করে বর্তমান বসতি থেকে উচ্ছেদ করে দিলে তাদের যাওয়ার আর কোনও জায়গা থাকবে না। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে গোপীবাগ (টিটিপাড়া) রেলওয়ে হরিজন ও তেলুগু কলোনীর বাসিন্দাদের বিকল্প পুনর্বাসনের মাধ্যমে এ বিপুল সংখ্যক মানুষের নূন্যতম মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করার জরুরি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *