আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর: বিগত নির্বাচনে সরকারি দলের সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামি লিগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার। অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঐক্য পরিষদের তরফে জানানো হয়েছে, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে আনোয়ার শনিবার বিকালে অনশনস্থলে উপস্থিত হন। অনশনের দাবি ও কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেন তিনি। অনশন কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে কবির বিন আনোয়ার বলেন, আমরা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজনে বিশ্বাস করি না। আমরা সবাই মিলেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই।
বিগত নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিসমূহ সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামি লিগ সরকার অবশ্যই এ সমস্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে। তিনি জানান, বৈষম্য বিলোপ আইনটি বিল আকারে জাতীয় সংসদে ইতোমধ্যেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিলটি যাচাই ও বাছাইয়ের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাধীন রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই বিলটি সংসদে পাশ করা হবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন শেখ হাসিনা সরকারই প্রণয়ন করেছে। এই আইন প্রয়োগ করে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যেখানে যেখানে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখে সঙ্কটের সমাধান করা হবে।
পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও চুক্তি অনুসারে পার্বত্য ভূমি কমিশনও শেখ হাসিনা সরকার সম্পাদন করেছে। এক্ষেত্রে চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে। বাকি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি এখনো সম্ভব হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রেও দ্রুততম সময়ে সরকার আপনাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
কবির বিন আনোয়ারের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ৪৮ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি এই পর্যায়ে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমাদের সবাই আশ্বাস দেয় আর প্রতারণা করে। আমরা অতীতেও বারবার প্রতারণার শিকার হয়েছি।
এবার আর প্রতারণার শিকার হতে চাই না। অক্টোবরের মধ্যে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে ঘোষণা বাস্তবায়ন করবেন কিনা সেটা আমরা দেখতে চাই। এবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আর ভোট চাইতে পারবেন না। আর ভোট না চেয়ে আমাদের ভোট পাবেন- এমনটা আর মনে করা ঠিক হবে না। আমরা আজ অনশন প্রত্যাহার করলেও ৬ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ আমরা করবো। এর মধ্যে সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে আমরা সেখান থেকে পরবর্তী অবস্থান ঘোষণা করবো।
এরপর কবির বিন আনোয়ার রাণা দাশগুপ্তসহ অনশনকারী অন্যান্য নেতা কর্মীদের জলপান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। অনশনে অসুস্থ রাণা দাশগুপ্তসহ অন্য দু’জন হাসপাতালে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া অনশন পালনকালে শনিবার সকাল থেকেই ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণা দাশগুপ্তর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।
এক পর্যায়ে শারীরিক অবস্থা বেশি অবনতি হলে শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একদল চিকিৎসক এসে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। চিকিৎসকরা জানান, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাই সমিচীন। কিন্তু রাণা দাশগুপ্ত অনশনস্থল ছেড়ে কোনোভাবেই হাসপাতালে যেতে রাজি হননি। পরে তাঁকে অনশনস্থলেই স্যালাইন প্রয়োগসহ অন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এছাড়া আরো বেশ কয়েকজন নেতা কর্মী অনশনজনিত দুর্বলতা ও অন্যান্য জটিলতায় আক্রান্ত হলে সেখানে তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়। এদের মধ্যে মহিলা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শিখা মন্ডল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
অনশনে সংহতি বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক নেতৃবৃন্দের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে দুই দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নাগরিক নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও প্রাক্তন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার এমপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বর্তমান সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা ও ডাকসুর সাবেক জি এস ডা: মুশতাক হোসেন, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাণিক, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা: ফওজিয়া মোসলেম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, শহিদ সন্তান আসিফ মুনির তন্ময়, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডি’র প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা মকবুল এলাহী চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইঞা, জগন্নাথ হলের প্রোভোস্ট অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দীপক শীল, জাসদ ছাত্র লিগের সভাপতি গৌতম শীল প্রমুখ।