সাথী প্রামানিক, পুরুলিয়া, ৪ ডিসেম্বর: ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুরে ইন্দো তিব্বতীয় বর্ডার পুলিশের এক সতীর্থর এলোপাথাড়ি গুলিতে মৃত্যু হল পুরুলিয়ার এক জওয়ানের। বুধবার, সকালের ওই ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এঁদের মধ্যে এই রাজ্যেরই তিন জওয়ান রয়েছেন। ওই ঘটনায় জখম হন আরও দুই জন।
জানাগিয়েছে, এদিন সকালে নারায়ণপুর জেলার কাদেনারে ইন্দো তিব্বতীয় বর্ডার পুলিশের ক্যাম্পে উত্তেজিত হয়ে মাসুদুল রহমান নামে এক জওয়ান নিজের সার্ভিস রিভালবার দিয়ে আচমকা এলোপাথাড়ি গুলি চালায় সতীর্থদের লক্ষ্য করে। পরে ওই জওয়ানও আত্মঘাতী হন। ঘাতক সহ গুলিতে মৃত্যু হয় এই রাজ্যের তিন জনের। মাসুদুলের বাড়ি নদিয়া জেলার বিলকুমরি গ্রামে। অন্যদিকে বর্ধমানের উত্তর শ্রীরামপুর গ্রামের সুরজিত সরকার গুলিতে মারা যান।
নিহত হন পুরুলিয়ার আড়শা থানার খুকড়ামুড়া গ্রামের বিশ্বরূপ মাহাতো(২৬)। মৃতের বাড়িতে অপ্রত্যাশিত শোকের খবর অনেক দেরিতে পৌঁছায়।সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে খবর পেয়ে কর্মস্থল থেকে ছুটে আসেন বিশ্বরূপের বড় দাদা আশিস। সেই সময় বাবা ভীম চন্দ্র মাহাতো বাড়িতে ছিলেন। মা ভাগ্য মাহাতো মাঠে গিয়েছিলেন কাজে। মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছাতেকান্নায় ভেঙে পড়েন বাড়ির সবাই। শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা গ্রামে।
তিন ভাইয়ের মধ্যে বিশ্বরূপ ছোট। মেজ ভাই সুবোধ মাহাতো রাজ্য পুলিশের জুনিয়ার কনস্টেবল। বাঁকুড়ার খাতড়াতে কর্মরত তিনি। বিশ্বরূপ পুরুলিয়ার জে কে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ২০১৪ সালেইন্দো তিব্বতীয় বর্ডার পুলিশ(আইটিবিপি)-এ কাজে যোগ দেন। প্রথমে রাজস্থানের যোধপুরে কাজে যোগ দেন। পরে গ্যাংটক এবং প্রায় দেড় বছর আগে ছত্তিসগড়ের নারায়ণপুরের ক্যাম্পে যোগ দেন তিনি। কালীপূজার সময় ছুটিতে এসে কুড়ি দিন পর কর্মস্থলে ফিরে যান। তার পর থেকে নিয়মিত রাতে মা ও বাবা ও বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা হতো তাঁর। মঙ্গলবার রাতেও বিশ্বরূপ মা বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আর আজ ছেলের মৃত্যুর খবর পেল পরিবার। চনমনে ছেলের বিনা কারণে সতীর্থেড় গুলিতে মৃত্যু হবে ভাবতে পারে নি বিশ্বরূপের পরিবার। তাঁদের প্রশ্ন ক্যাম্পের জওয়ানদের মানসিক অবস্থা নিয়ে কেন ভাবে না ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ? যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ উত্স্বর্গ করেছেন তাঁদের নূন্যতম মানসিক শান্তিতে রাখা যাবে না শিবিরে? ছেলের মৃত্যুর জন্য প্রশাসনিক পদ্ধতিকে দায়ী করেছেন মৃত বিশ্বরূপের পরিবার।