ড. রাজলক্ষ্মী বসু
আমাদের ভারত, ৩ মে: উনি কিন্তু নিজের মুখে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন। তাহলে মানুষের মনে পরিসংখ্যা চিত্র নিয়ে কেন আতঙ্ক সন্দেহ আর বিশ্বাস নষ্ট করছে! আমরা সবাই যে সত্যি জানতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং বলেছিলেন, “মানুষ দুঃখ পায় এমন কোনও কাজ করবেন না”। কিন্তু বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মানুষের মনের যন্ত্রণা যে দিন দিন বাড়ছে।
করোনায় মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই এ রাজ্যে নানান লুকোচুরি। এবার প্রকাশ্যে আসছে করোনা আক্রান্তর সংখ্যা নিয়ে বহু কি, কেন প্রশ্ন। ৩০ এপ্রিল রাজ্য মুখ্যসচিবের দেওয়া তথ্য বলে, এ রাজ্যে অ্যাক্টিভ কোভিড ১৯ এর সংখ্যা ছিল ৫৭২, ঠিক তার পরের দিনই মোট করোনা মৃত পরিসংখ্যা ছিল 33। তিনি আবার বলেছেন মোট সেরে ওঠা রোগীর সংখ্যা ১৩৯। কিন্তু এই হিসাবানুযায়ী তো মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঐ দিন পর্যন্ত হওয়ার কথা ৭৪৪! সাধারণ যোগ বিয়োগ যে তাই বলে। এর জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ দল বা কিছু লাগে না।
আবার আসি কো- মরবিডিটি অঙ্কের খেলায়। রাজ্যে কো- মরবিডিটি উক্ত সময় পর্যন্ত ছিল ৭২, তাহলে মোট মৃত ব্যক্তি + করোনা পজিটিভ এই সংখ্যাটা দাঁড়াল ১০৫ এবং মোট করোনা আক্রান্তের আসল সংখ্যা হবে ৮১৬। মুখ্যসচিব অঙ্কের ভালো ছাত্র নন। আর বলার অবকাশ রাখে না এবং গোঁজামিলেও তেমন রপ্ত নন।
এরপর যেই কেন্দ্রীয় দল এ রাজ্যের দশটি জেলাকে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে লাল চিহ্নিত করে তখনই গেল গেল রবে রাজ্যের স্বাস্হ্য সচিব ঝাঁপ দেন। এবার বাধে আরো গোলমাল। একই রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব করোনা নিয়ে দু জন দু রকম তথ্য দিচ্ছেন। কি ভীষণ ধাঁ ধাঁ। কোমড় বেঁধে তিনি সারা রাজ্যের সব কমলা, লাল জেলার করোনা আক্রান্তের ইয়া লম্বা এক তালিকা দেন। আঙুলের কর গুনে তার যোগফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩১। এবার বলুন তো এই পরিস্থিতিতে এতো জটিল অঙ্কের সমীকরণ সমাধান কোন গানিতজ্ঞ করতে আগ্রহী?
অঙ্কের গরমিল হবেই, কারণ তথ্যই যে মেঘে ঢাকা। তবলিগ জমাতের ক’জন এ রাজ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। এ সত্যি টাও জানতে দেওয়া হয়নি। না কোনও রাজনীতির তরজা নয়, এ হল মানুষের বেঁচে থাকার প্রশ্ন। মানুষের সুরক্ষার লড়াই। এখনও কিন্তু তবলিগ জামাতে অংশ গ্রহণকারি নিজামুদ্দিন ফেরতদের নামের তালিকাটাই প্রকাশ পায়নি। ঠিক ক’জন এ রাজ্য থেকে গিয়েছিলেন তাই পরিস্কার নয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে পরিসংখ্যা নিয়ে কারসাজি চলছে। রাজ্য যেখানে বলছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত জমাত ফেরত বিদেশী এ রাজ্যে ৪২, আবার কলুটোলা মারকাজি মসজিদের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকার কে চিঠি করে জানানো হয় যে আগত এবং বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত নিজামুদ্দিন ফেরত মোট বিদেশী র সংখ্যা ৯।
কঠিন পরিস্থিতিতে পরিসংখ্যার অস্পষ্টতাও জনস্বার্থ বিরোধী নীতি অনুসরণ করছে। মানবিক কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি উন্নয়নের অন্যতম দিক। যদি সেই স্বার্থ বিঘ্নিত হয় তাহলে আমাদের কি হবে জানি না। কিন্তু উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে।
(তথ্য এবং মতামত লেখকের ব্যক্তিগ।)