জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১০ ফেব্রুয়ারি: দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বসবাস। বিগত ৮ বছর ধরে আন্দোলন করেও পাট্টা জোটেনি। বৃহঃস্পতিবার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে ভূমিহীনদের পাট্টা দেওয়া হলেও দুর্গাপুর পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডের উদ্বাস্তুদের পাট্টা জুটল না। আর তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়।
প্রসঙ্গত, দুর্গাপুর পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর, মধুপল্লী, ধোবীঘাট, কমলাইতলা, খাটগড়িয়া বিজুপাড়া বস্তি। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের বসবাস। বেশীরভাগই দিনমজুর ও উদ্বাস্তু পরিবার। নাগরিক পরিষেবায় পানীয় জল, বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। পেয়েছে রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড। অভিযোগ, নাগরিক পরিষেবা জুটলেও জোটেনি মৌলিক অধিকার বসত জমির পাট্টা। আর পাট্টা না পাওয়া বঞ্চিত প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি থেকে ব্যাঙ্ক ঋনের সুবিধা। আর তাই স্থায়ীকরনের দাবীতে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন বস্তি কল্যান সমিতি গঠন করেছে বাসিন্দারা।
বিগত ৮ বছর ধরে পাট্টার দাবীতে আন্দোলন করছে ওই সংগঠন। তাদের শ্লোগান ‘ভুমীহিনদের পাট্টা চাই’। বৃহঃস্পতিবার কলকাতায় নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রায় দু হাজার ভুমিহীনদের হাতে পাট্টা তুলে দেন। অন্যদিকে পাট্টা না পেয়ে দুর্গাপুর পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডের উদ্বাস্তু পরিবাররা হতাশ। এদিন নিজের এলাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করল ওইসব উদ্বাস্তু পরিবাররাগুলি। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বলেন, “আজ মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা থেকে ২০০০ পরিবার কে পাট্টা দিচ্ছেন। আমরা ধোবিঘাট, রঘুনাথপুর, মধুপল্লী, বিজুপাড়া, কমলাইতলা, জেসি বোস বস্তি এলাকার পাট্টা নিয়ে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সরকারী সমস্ত দফতরে গিয়ে জুতোর শুকতলা খুইয়েছি। অথচ আমাদের পাট্টা দেওয়া হল না।” প্রশ্ন, কেন পাট্টা পেল না ধোবিঘাট, বিজুপাড়া, কমলাইতলার বাসিন্দার? প্রসঙ্গত, ওই জায়গার বেশীর ভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত সেইলের দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের। যদিও জমিটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাসিন্দারা দাবী করে জানান, “আমাদের এখানে ৪০০০ পরিবারের বসবাস। ১৯৯৪ সালের আগে এই জায়গা ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের। মাত্র ১৬ টাকায় ডিএসপি কে বিক্রি করা হয়েছে। জমিটি ডিএসপি ব্যবহার করে না। এছাড়াও ডিএসপির যে দলিল আছে তাতে উল্লেখ রয়েছে রাজ্যসরকার যেকোনো সময় জায়গা ফেরত নিতে পারে। তাই ওই দলিল বাতিল করে রাজ্য সরকারকে বাসিন্দাদের পাট্টা দেওয়ার জন্য নথিসহ বহুবার আবেদন করেছি। আজও আমরা মূখ্যমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষন করছি।”
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন বস্তি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণ মাল জানান, “১৯৯৪ সালে ওই বসত জমিটি দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষকে শর্ত সাপেক্ষে রাজ্য সরকার দিয়েছে। ইস্পাত কর্তৃপক্ষ জমিটি এখনও পর্যন্ত কোনও কাজে ব্যাবহার করেনি। বসত জমিটি স্থায়ীকরনের দাবী বহুবার রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি। কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি প্রশাসনের। আর তার মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদের। অসহায় হতদ্ররিদ্র পরিবার, তবুও জমিজটে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাই না। ব্যাঙ্কের কোনওরকম ঋণ পাই না। দুর্গাপুর ইস্পাতের জমি ফিরিয়ে নিয়ে বেসকারী হাসপাতাল, রিয়েল এস্টেটকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের পাট্টা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের প্রতি দ্বিচারিতা করা হচ্ছে। তাই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।”
১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শিপ্রা সরকার জানান, “পাট্টার বিষয়টি রাজ্য ভুমি রাজস্ব দফতরে জানিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার চিন্তাভাবনা করছে।”