স্নেহাশীষ মুখার্জি,আমাদের ভারত, নদীয়া, ১২ এপ্রিল:
শান্তিপুরের চড়কতলার মণ্ডল মসজিদে আইনকে আমান্য করে চলল নামাজ পড়া। খবর পেয়ে পৌঁছয় শান্তিপুর থানার পুলিশ। অবশেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নমাজ পড়া বন্ধ হয়। তবে শান্তিপুর প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।
দিল্লিতে ধর্মীয় সমাবেশ ঘিরে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। কদিনের মধ্যেই দেখা যায় ঐ সমাবেশে যোগ দেওয়া বহু মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সব ধরনের ধর্মীয় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো জমায়েত বন্ধ রাখার। পাশাপাশি নির্দেশ অমান্য করে জমায়েত করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পরে গত শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞাতেও নমাজ পড়া হয়। এবার একই ঘটনা ঘটল শান্তিপুরে।
একাধিক মসজিদ এবং ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বহুবার বার্তা দেওয়া হয়েছিল যে মসজিদে নমাজ না পরে বাড়িতে পড়ুন। এমনকি বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শান্তিপুরের বিভিন্ন মসজিদে ফোন করে তাঁদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল যে এখন যেন তাঁরা বাড়িতেই নমাজ পড়েন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে শান্তিপুরের মুসলিম সমাজের ৭০ শতাংশ মানুষ জমায়েত না করে বাড়িতে বসেই নামাজ পড়ছেন।
কিন্তু এর পরও শান্তিপুরের চরকতলায় মণ্ডল মসজিদে আইনকে অমান্য করে চলল নামাজ পড়া। প্রশাসনের নাকের ডগায় লকডাউন ভেঙে শুক্রবার নামাজ পড়লেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। শুক্রবার সন্ধ্যায় মসজিদে নমাজ পাঠের জন্য জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা। খবর পেয়ে পৌঁছয় শান্তিপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং নমাজ পাঠ বন্ধ করে।
বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, দু’একটা জায়গায় জমায়েত হলেও আগামীদিনে তা কমে যাবে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া কলকাতায় বিভিন্ন জায়গায় পাঁচশো মসজিদ রয়েছে এবং সারা রাজ্যে চল্লিশ হাজার মসজিদ আছে। অধিকাংশ জায়গাতেই মানুষজন আসেননি।
শান্তিপুরের তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজয় দে জানান, বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশন যখন মসজিদ বন্ধ রেখে বাড়িতে নমাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তাহলে কেন এটা করলেন? এটা করা ঠিক হয়নি। এখন সবাইকে জমায়েত থেকে বিরত থাকা উচিত।
শান্তিপুরের বিরোধীদলের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা সিপিআইএমের শান্তিপুর শাখার সম্পাদক সোমেন মাহাতো জানান, এলাকার মানুষ একত্রিত হয়ে আমার কাছে এই অভিযোগ জানিয়েছিল যে এখানে লকডাউন অমান্য করে জমায়েত করে নামাজ পড়া হচ্ছে। এখানে সামাজিক দূরত্বটাকেও মানা হচ্ছে না। আশপাশের অনেকে এসেছেন এখানে নামাজ পড়তে। এই মসজিদটা যেহেতু পারিবারিক মসজিদ সেহেতু আমি ওই পরিবারের যিনি দেখভাল করেন তাঁর সাথে কথা বলেছি। তাঁকে সরকারি নির্দেশিকা সম্বন্ধে অবহিত করেছি। আমি তাঁকে বিষয়টা দেখতে বলি। তাকে বলি সব মানুষকেই সরকারি নির্দেশিকা মানতে হবে। এটা আমাদেরই ভালো।
রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার জানান, সারা পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের ঘটনা চলছে। এখানে লকডাউন হলেও একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের সব সময় ছাড় আছে। আমরা মুর্শিদাবাদেও দেখছি, আবার নদীয়াতেও দেখছি। সারা বাংলা জুড়ে একই চিত্র।
বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া জানান, বর্তমানে এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের মত মহামারীর ক্ষেত্রে আমাদের যে বৈজ্ঞানিক ভাবনা চিন্তা আছে তা সবাইকে মানা উচিত। ডাক্তাররা যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলছেন সেটা মানা আমাদের কর্তব্য। এক্ষেত্রে কোরান এবং হাদিসে ব্যতিক্রম কিছু নেই। কোরান এবং হাদিস খুব স্পষ্ট করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছে এবং বিজ্ঞানকে মেনে চলার কথা হাদিসেও বলা হয়েছে খুব স্পষ্ট করে। যদি কোনও ব্যক্তি এটাকে অস্বীকার করে তা হলে তিনি ইসলামকে অনুসরণ করছেন না, তিনি কুফরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমি আরেকবার সবার কাছে অনুরোধ করছি, শুধু মসজিদ বলে নয় সমস্ত বাজার এলাকাতেই আপনারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, যতদিন না ডাক্তার এবং প্রশাসন বলে। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার মানুষের নিরাপত্তার কারণে যে সমস্ত হুকুম জারি করে সেটা মেনে চলা মুসলমানদের জন্য ফরজ।