Modi, Trump, দেশের কৃষকদের স্বার্থের সঙ্গে কোনো রকম আপোষ নয়, ট্রাম্পের আমেরিকাকে কড়া বার্তা মোদীর

আমাদের ভারত, ৭ আগস্ট: কৃষক স্বার্থের সঙ্গে কোনো আপোষ নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর সিদ্ধান্তে পাল্টা কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জোর দিয়ে বললেন, ভারত কখনই তার কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের স্বার্থের সঙ্গে আপোষ করবে না। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের জন্য তাকে হয়তো ব্যক্তিগত মূল্য দিতে হবে, তবু দেশের কৃষকদের জন্য তা করতে তিনি তৈরি।

দিল্লিতে এম এস স্বামীনাথন শত বর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন মোদী। সেখানে তিনি বলেন, কৃষকদের স্বার্থ আমাদের অগ্রাধিকার। ভারত কখনই তার কৃষক, পশুপালক, মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আপোষ করবে না। আমি জানি যে এর জন্য আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বড় মূল্য দিতে হবে, কিন্তু আমি প্রস্তুত আছি। দেশের কৃষক, মৎস্যজীবী এবং পশুপালকদের স্বার্থ রক্ষায় ভারত সদা প্রস্তুত।

সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল, ভারত- আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে অন্তরায় ছিল মূলত কৃষি এবং দুগ্ধ জাতীয় দ্রব্য। এই দুই ক্ষেত্রেই দু’ দেশ একমত হতে না পারায় বাণিজ্যিক চুক্তি নিয়ে বারবার দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চললেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এরপর ভারতের উপর দু’ দফায় ৫০% শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছে ট্রাম্প। কিন্তু তার পাল্টা কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে আমেরিকাকেও বড় বার্তা দিলেন মোদী।

ভারত- আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত রূপ পাওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। এখনো পর্যন্ত দু’ দেশের মধ্যে ৫ দফা আলোচনা হয়েছে। আরো আলোচনা হওয়ার কথা। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার আগে একটি অন্তর্বর্তী সমঝোতা সেরে নিতে চেয়েছে দুই দেশ। চলতি মাসে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের ভারতে আসার কথা। সূত্রের খবর, আমেরিকা চায় ভারত কৃষি পণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক। কিন্তু তাতে নারাজ নয়া দিল্লি। এতে আমেরিকার একার সুবিধা হবে, ফলে এরকম একপাক্ষিক চুক্তি করতে নারাজ ভারত।

প্রসঙ্গত, বুধবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ভারতের ওপর আরো ২৫% শুল্ক চাপানো হয়েছে। তাঁর কথায়, রাশিয়া থেকে ভারত এখনো তেল কেনা চালিয়ে যাচ্ছে, তার শাস্তি স্বরূপ তিনি ভারতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি কর বসিয়েছেন। এবার ভারতীয় পণ্যের উপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপাবে আমেরিকা। এক্সিকিউটিভ অর্ডার সই করে ট্রাম্প জানান, ২১ দিন পর থেকে ভারতের জন্য এই নয়া শুল্ক হার কার্যকর হবে। সেখানে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, “প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভারত বর্তমানে রুশ তেল আমদানি করছে, তাই আমার মনে হয় ভারতের ওপর আরও বেশি শুল্ক চাপানো দরকার।”

ট্রাম্পের ঘোষণার পরেই কড়া বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বলে, গত কয়েকদিন ধরে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির বিষয়টিকে টার্গেট করেছে আমেরিকা। এই বিষয়ে আমরা নিজেদের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছি। বাজারে পরিস্থিতি এবং দেশের ১৪০ কোটি মানুষের শক্তি সম্পদের চাহিদার দিকে নজর রেখে আমদানি করা হয়। ভারতের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বোমার আঘাতের পরে মোদীও এবার বুঝিয়ে দিলেন ভারতের ভিত্তি কৃষি। গোটা দেশবাসীর মুখে অন্ন যোগান কৃষকরা। এখানকার কৃষি ক্ষেত্র স্বাধীন। বাড়তি মুনাফার জন্য সেই স্বাধীনতার সঙ্গে সমঝোতা কোনভাবেই করা হবে না। তেমন হলে নিজেদের জমিতে ক্রীতদাসে পরিণত হবেন কৃষকরা।

এ বিষয়ে বামপন্থী সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার তরফে হান্নান মোল্লার দাবি, কৃষি, দুগ্ধসহ খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্র কোনো ভাবে পুঁজিপতিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এর প্রতিবাদ জানাতে ১৩ আগস্ট মোদী- ট্রাম্পের কুশ পুতুল দাহ করার কর্মসূচি নিয়েছে কৃষক সভা। কিন্তু তারই মধ্যে মোদীর মুখেও শোনা গেল কৃষক স্বার্থের কথাই।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যক্তিগত মূল্য চোকানোর অর্থ ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কথাই সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *