আমাদের ভারত, ১৭ মে :করোনা পরবর্তী আর্থিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কুড়ি লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তারপর থেকে গত ৫ দিন ধরে সেই প্যাকেজের বিস্তারিত ঘোষণা করে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আত্মনির্ভর ভারত গড়তে ধাপে ধাপে দেশের সব ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র সরকার, পাঁচ দিন ধরে প্যাকেজ ঘোষণায় মিলল সেই বার্তাই বলছেন বিরোধীরা।
পঞ্চম দিনে নির্মলা সীতারামন জানিয়ে দিলেন আত্মনির্ভর ভারতের একটি শক্তি হবে পাবলিক সেক্টর এন্টারপ্রাইজ নীতি। এই নীতির ওপরে ভর করে কেন্দ্রের পরিকল্পনা স্ট্র্যাটেজিক সেক্টর কমপক্ষে একটি সংস্থা হবে সরকারি। কিন্তু বেসরকারি সংস্থাকেও অনুমতি দেওয়া হবে।
সিতারামান বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ খরচ কম করতে স্ট্র্যাটেজিক সেক্টরে সরকারি সংস্থার সংখ্যা এক থেকে চার হতে পারে। অন্যরা হবে বেসরকারি।
বিরোধীরা বলছেন, মূলত শনিবারে নির্মলা সীতারামনের একাধিক ঘোষনার দিকে নজর রাখলেই স্পষ্ট হয় সরকার দেশের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাশ আর নিজের হাতে রাখতে চাইছে না। কয়লা, খনির এমনকি মহাকাশ গবেষণাতেও বেসরকারি সংস্থার অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে সরকার।
A new #AatmanirbharBharat will stand on a new Public Sector Enterprise Policy
In strategic sectors, at least one enterprise will remain in the public sector but private sector will also be allowed
In other sectors, PSEs will be privatized #AatmaNirbharApnaBharat pic.twitter.com/9eYyjaNgZl
— PIB India (@PIB_India) May 17, 2020
অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সরকারের একচেটিয়া ক্ষমতা আর থাকবে না। কয়লা শিল্পে বেসরকারিভাবে উত্তোলন করা হবে কয়লা। পাওয়া যাবে বাজারমূল্যে। যারা নির্দিষ্ট সময়ের আগে কয়লা উৎপাদন করতে পারবেন তারা ইনসেন্টিভ পাবেন। ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে ইভাকুয়েশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের এর জন্য। ৫০ টি কয়লা ব্লক নিলাম করা হবে।
খনিজের ক্ষেত্রে এক্সপ্লোরেশন কাম প্রোডাকশন সিস্টেম চালু হবে। তাতে অংশগ্রহণ করবে বেসরকারি সংস্থা। ৫০০ ব্লকে এই নতুন নিয়ম চালু হবে। মাইনিং লিজ দেওয়ার পর তা হাতবদল করা যাবে। খনি লিজ নেওয়ার সময় স্ট্যাম্প ডিউটি বাস্তবসম্মত করা হবে।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরির ক্ষেত্রে কিছু অস্ত্র আর বিদেশ থেকে আমদানি করা যাবে না। তার একটি নির্দিষ্ট তালিকা তৈরি হবে। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়বে। তা নিয়ে সেনা সঙ্গেও কথা বলা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করা হবে। অর্ডিন্যান্স বোর্ড করপোরেটাইজ করা হবে। সাধারন মানুষ এর শেয়ার কিনতে পারবেন।
আরো ছটি বিমানবন্দর নিলাম করা হবে। কাজ হবে পিপিপি মডেলে।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিদ্যুতের বেসরকারিকরণ হবে। নতুন পলিসি ঠিক হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহে বেসরকারিকরণ হবে।
সোশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ হবে।
মহাকাশ সম্পর্কিত টেকনোলজিতে বেসরকারি সংস্থার প্রবেশাধিকার মিলবে। সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে। তবে সরকার সতর্ক থাকবে।
পরমাণুর ক্ষেত্রে মেডিকেল আইসোটোপ তৈরিতে পিপিপি মডেলে কাজ হবে। কৃষিতে রেডিয়েশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে।
তবে সরকারের এই বেসরকারিকরণের একাধিক ভাবনা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে আরএসএস সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বৃজেশ উপাধ্যায় বলেছেন, “প্রথম তিনদিনের ঘোষণায় যারা হাওয়ায় ভাসছিলেন দেশ ও তাদের জন্য আজ দুঃখের দিন। তার কথায় শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় ইচ্ছুক নয় সরকার। আর এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে সরকারের কতখানি অভাব রয়েছে আত্মবিশ্বাসের। এটা নিন্দাজনক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সংগঠন বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করে আসছে। নীতিনির্ধারকদের কাছে সংস্কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানে বেসরকারিকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনার মত অতি মহামারীর অভিজ্ঞতা বেসরকারি ক্ষেত্রে পঙ্গুত্ব প্রকোট ভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। এইসময় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”